বিএনপিকে চাপে রাখার কৌশল জামায়াতের

>
  • বরিশাল সিটি নির্বাচন
  • কাউন্সিলর পদে বিএনপির সঙ্গে দর-কষাকষি করতে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত।
  • ৩০ টির মধ্যে ৪ টিতে বিএনপির সমর্থন চায় দলটি।

সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই বরিশাল মহানগর জামায়াতের আমির মোয়াযযম হোসাইনকে মেয়র পদে দলের প্রার্থী ঘোষণা করে জামায়াত। এরপর থেকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তিনি ঘরোয়া সভা ও বৈঠক করেন। পবিত্র রমজানের ঈদের আগে নাগরিক পরিষদের ব্যানারে ছবিসহ তাঁর পোস্টার লাগানো হয় শহরের বিভিন্ন এলাকায়। সামাজিকভাবেও তাঁর পক্ষে প্রচারণাও চালান দলের নেতা-কর্মীরা।

মেয়র পদে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করার পরও জামায়াত তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়নি। এ বিষয়ে বরিশাল মহানগর বিএনপির নেতারা বলেন, সিটি করপোরেশেনের ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে অন্তত চারটিতে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায় জামায়াত। এই চার ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে বিএনপির সমর্থন চায় দলটি। একই সঙ্গে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্য রাজনৈতিক তৎপরতার সুযোগ পেয়েছে জামায়াত। মূলত এই দুটি কারণেই কৌশল হিসেবে মেয়র পদে জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করেছে।

 বরিশাল মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন সিকদার গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, দলীয়ভাবে কাউন্সিলর প্রার্থীদের নাম এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। এ নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা চলছে। জামায়াতের সঙ্গে কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়েও আলাপ-আলোচনা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বিএনপির নেতারা বলছেন, মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে শেষ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেবে না জামায়াত। ২৮ জুন (আজ) মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন।

বরিশালে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার। জামায়াত ছাড়া জোটের অন্য দলগুলো বিএনপির প্রার্থীর সঙ্গেই রয়েছে।

জামায়াতের মেয়র প্রার্থী মোয়াযযম হোসাইন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশা করি মনোনয়নপত্র দাখিলের আগেই এ বিষয়ে ২০-দলীয় জোটের সভায় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির ফয়সালা হয়ে যাবে। কাউন্সিলর পদ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতাও হবে।’

এদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে। জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য ইকবাল হোসেন গতকাল মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দলের পক্ষ থেকে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনের কিংবা জোটের অন্য শরিকের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো নির্দেশনা নেই। বরং দল থেকে তাঁকে নির্বাচনের মাঠে থাকতে বলেছে। তবে কাউন্সিলর পদে দলীয়ভাবে তাঁরা কাউকে সমর্থন দেবেন না।

জাতীয় পার্টিকে না পেলেও সিটি নির্বাচনে ১৪-দলীয় জোটকে পাশে চায় আওয়ামী লীগ। জোটের শরিকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলাপ-আলোচনা হয়েছে।

 ১৪ দলের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির বরিশাল জেলা কমিটির সভাপতি নজরুল হক গতকাল দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ১৪-দলীয় জোটের সমন্বয়ক সাংসদ তালুকদার মোহাম্মদ ইউনূস নির্বাচন নিয়ে আলোচনার জন্য তাঁদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছেন।

মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থিতা প্রসঙ্গে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘আমরা আজ (বুধবার) ১৪ দল নিয়ে বসব। মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি নিয়েও আমরা পরে বসব।’

বরিশাল সিটি নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত মেয়র পদে মোট ছয়জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। তাঁরা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, বিএনপির মজিবর রহমান সরোয়ার, জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন, বাসদের মণীষা চক্রবর্তী, সিপিবির এ কে আজাদ এবং ইসলামী আন্দোলনের ওবায়দুর রহমান। এর মধ্যে সিপিবি, বাসদ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী গতকাল মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

এ ছাড়া ৩০টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে গতকাল পর্যন্ত মোট ১৩৪ জন এবং সংরক্ষিত (নারী) কাউন্সিলরের ১০টি পদে মোট ৪০ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।