নেত্রকোনায় শিক্ষার্থীর অভিভাবকের ঘুষিতে প্রধান শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ

নেত্রকোনার কলমাকান্দায় এক শিক্ষার্থীর অভিভাবকের ঘুষিতে প্রধান শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগে আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মিছিল বের করা হয়। ছবি: প্রথম আলো
নেত্রকোনার কলমাকান্দায় এক শিক্ষার্থীর অভিভাবকের ঘুষিতে প্রধান শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগে আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মিছিল বের করা হয়। ছবি: প্রথম আলো

নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় এক শিক্ষার্থীর অভিভাবকের ঘুষিতে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আজ সোমবার দুপুরে নিহত প্রধান শিক্ষকের ছোট ভাই আলাল উদ্দিন বাদী হয়ে কলমাকান্দা থানায় মামলা করেছেন।

নিহত শিক্ষকের নাম দেলোয়ার হোসেন (৫০)। তিনি কলমাকান্দা উদয়পুর মিতালী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। একই উপজেলার পোগলা গ্রামের বাসিন্দা তিনি।

যে অভিভাবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি হলেন উদয়পুর গ্রামের বাসিন্দা চান মিয়া (৪৫)।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা, পুলিশ ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রোববার থেকে উদয়পুর মিতালী উচ্চবিদ্যালয়ের ষাণ্মাসিক পরীক্ষা শুরু হয়। প্রথম দিন বাংলা পরীক্ষা নেওয়া হয়। এতে মারুফ আহম্মদ নামের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্র অংশ নিতে গেলে প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন পরীক্ষার ফি ও তার কাছে পাওনা ভর্তিসহ মাসিক বকেয়া বেতন চান। পরে ওই শিক্ষার্থী টাকা দিতে না পারায় বাড়ি গিয়ে তার বাবাকে বিষয়টি জানায়। ছেলের কথা শুনে বাবা চান মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর কয়েকজন স্বজনকে নিয়ে বিদ্যালয়ে আসেন এবং প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে চান মিয়া শিক্ষকের বুকে জোরে ঘুষি দিলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে অন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এগিয়ে গেলে চান মিয়া ও তাঁর লোকজন সেখান থেকে সটকে পড়েন।

স্থানীয় লোকজন আহত শিক্ষককে প্রথমে কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে ওই দিন সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে রাত ১০টার দিকে তিনি মারা যান।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোনায়েম তালুকদার বলেন, ‘পরীক্ষার ফি ও বেতনের টাকা নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে চান মিয়া প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলা চালিয়ে তাঁর বুকে কিল-ঘুষি মারেন। এতে আহত শিক্ষক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

এ নিয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত চান মিয়ার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাঁর বাড়ির পাশের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, শিক্ষক নিহত হওয়ার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার পরপর চান মিয়া ও তাঁর পরিবার গা-ঢাকা দিয়েছে।

কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মিজানুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘এ ঘটনায় নিহত শিক্ষকের ছোট ভাই বাদী হয়ে চান মিয়াকে প্রধান আসামি করে আটজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। নিহত শিক্ষকের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বর্জন, মিছিল
এদিকে প্রধান শিক্ষকের মৃত্যুর খবর শুনে আজ সকাল ১০টার দিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করে ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলটি বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে দীর্ঘ পথ হেঁটে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে ইউএনওর কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। মিছিলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ নানা শ্রেণি-পেশার লোকজন অংশ নেন।