খুলনা বিভাগে ৩ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৯২ জন, আহত ৪৩২

খুলনা বিভাগে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৯২ জন। বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় এ সংখ্যা অনেক বেশি। আর এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪৩২ জন। বিভাগের মধ্যে যশোরে দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনা বেশি ঘটেছে। ওই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে নড়াইল জেলায়।

এ নিয়ে গত ছয় মাসে এই বিভাগে ১৬১ জন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। বছরের প্রথম তিন মাসে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৬৯ জন নিহত হয়েছিলেন।

আজ সোমবার খুলনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে ওই তথ্য জানিয়েছে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা) খুলনা জেলা শাখা। খুলনা বিভাগে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত দুর্ঘটনার তথ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক দুর্ঘটনা রোধে করণীয় বিষয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সংস্থা থেকে সড়ক দুর্ঘটনার ওই তথ্য সংগ্রহ করেছে নিসচা। 


সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিসচার খুলনা জেলা শাখার উপদেষ্টা ও সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম। সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও খুলনা জেলা সাধারণ সম্পাদক এস এম ইকবাল হোসেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনা জেলা সাধারণ সম্পাদক কুদরত-ই-খুদা, নিসচার জেলা উপদেষ্টা ও খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মামুন রেজা, জেলা সভাপতি মো. হাছিবুর রহমান হাছিব, খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্যসচিব মো. বাবুল হাওলাদার, খুলনা উন্নয়ন ফোরামের মহাসচিব এম এ কাশেম প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তিন মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় খুলনা মহানগরের মধ্যে নিহত হয়েছেন ৭ জন আর আহত হয়েছেন ১৭৮ জন। খুলনা জেলায় নিহত হয়েছেন ১৭ জন এবং আহত হয়েছেন ২১২ জন। খুলনার বাইরে বাগেরহাটে ১১ জন নিহত ও ৪৫ জন আহত হয়েছেন; সাতক্ষীরায় ১১ জন নিহত ও ৩০ জন আহত; যশোরে ২৪ জন নিহত ও ৪৭ জন আহত; ঝিনাইদহে ১৯ জন নিহত ও ৩৪ জন আহত; মাগুরায় ৩ জন নিহত ও ৯ জন আহত; চুয়াডাঙ্গায় ৪ জন নিহত ও ৮ জন আহত; কুষ্টিয়ায় নিহত ১ জন আহত ১৯ জন; মেহেরপুরে নিহত ১ জন আহত ১৫ জন এবং নড়াইলে নিহত ১ ও আহত হয়েছেন ১৩ জন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে খুলনা বিভাগে সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ৬৯ জন নিহত হয়েছিলেন।

সাম্প্রতিক সময়ে খুলনা নগরে সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়। আর ওই দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়, বেপরোয়া গতির মাহেন্দ্র (থ্রি-হুইলার), নিয়ম না মেনে মোটরসাইকেল চলাচল, ইঞ্জিনচালিত রিকশার আধিক্য, অপরিকল্পিত ইজিবাইক এবং দিনের বেলা নগরে ট্রাক চলাচল। এ ছাড়া রয়েছে সড়কের পাশে ইট-বালু রাখা, ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়া ও ট্রাফিক আইন না মেনে চলা।

নিসচার খুলনা জেলা শাখার উপদেষ্টা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেন আবার নিরাপদে বাড়িতে ফিরতে পারি। আমাদের ভাই, বোন বা আত্মীয়স্বজন যেন কেউ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত না হন। যেন কেউ আহত হয়ে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু না হন।’ এ জন্য জনসচেতনতার পাশাপাশি দুর্ঘটনা রোধে সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কিছু নির্দেশনাও তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। বলা হয়, মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার না হওয়া, চলাচলের সময় রাস্তার ডান পাশ দিয়ে হাঁটা, সচেতনভাবে চলাচল করা, গাড়ির চালককে তাড়াতাড়ি যেতে না বলা, বাসের ছাদে বা অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে গাড়িতে না ওঠা ও সর্বোপরি ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে।