আয় ও সম্পদ বেড়েছে দুজনেরই

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খায়রুজ্জামান ও বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খায়রুজ্জামান ও বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন পাঁচ বছর আগে চড়তেন ২ লাখ টাকার গাড়িতে। এখন চড়ছেন ৩৬ লাখ টাকার গাড়িতে। বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের গাড়ি নেই। তবে গত পাঁচ বছরে তাঁর বার্ষিক আয় বেড়েছে ১৬ গুণের বেশি। নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে যাঁরা মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছিলেন এবারও তাঁরাই প্রার্থী। ওই নির্বাচনে খায়রুজ্জামান হেরে যান মোসাদ্দেক হোসেনের কাছে।

হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সদ্য বিদায়ী মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন ২০১৩ সালের হলফনামায় উল্লেখ করেছিলেন, তাঁর একমাত্র আয়ের উৎস মৎস্য চাষ এবং বার্ষিক আয় ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা। তখন তাঁর অস্থাবর সম্পদের অংশে হাতে নগদ টাকার পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৬৫ হাজার ১৫৫ টাকা। আর স্ত্রীর নামে নগদ টাকা দেখানো ছিল ৯ লাখ ৪৭ হাজার টাকা।

মোসাদ্দেক হোসেন এবার বার্ষিক আয় উল্লেখ করেছেন ৩১ লাখ ৭ হাজার ২৬০ টাকা, যা গত নির্বাচনের সময়ের মোট আয়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ১৮ গুণ। তাঁর হাতে নগদ টাকার পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৪২ লাখ ৩০ হাজার ৭৫৮ টাকা। আর স্ত্রীর নামে ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৮০০ টাকা। এবার তাঁর তিনটি আয়ের খাত—শেয়ার, মেয়রের সম্মানী ভাতা ও মৎস্য চাষ। গতবার দুটি ব্যাংকে ঋণ ছিল ১০ লাখ ৮৩ হাজার ৭৭৪ টাকা। এবার কোনো দেনা নেই। তাঁর নামে বিস্ফোরকদ্রব্য ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটটি মামলা বিচারাধীন।

বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মেয়র হিসেবে সম্মানী পাওয়ার কারণে তাঁর আয় বেশি মনে হচ্ছে। মেয়র নির্বাচিত না হলে তাঁর আয়ের পরিমাণ অতটা হতো না। আর ব্যবসা থেকে কিছু আয় বাড়তেই পারে। এটা স্বাভাবিক। 

আয় ও সম্পদ বেড়েছে খায়রুজ্জামানের
খায়রুজ্জামান গত পাঁচ বছরে মেয়র না থাকলেও তাঁর আয় ও সম্পদ বেড়েছে। গতবারের হলফনামায় গাড়ির দাম ছিল ২ লাখ টাকা। এখন যে গাড়ি ব্যবহার করেন তার দাম ৩৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা। গত নির্বাচনের সময়ে দাখিল করা হলফনামায় তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ৫৮ লাখ ৭৫ হাজার ৭৭২ টাকা। এবার ৭৮ লাখ ৩২ হাজার ২০৮ টাকা। গত বছর তাঁর কৃষি খাত অনাবাদি থাকলেও এবার সেই খাত থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা আয় করেছেন। গতবার বাড়ি ভাড়া থেকে কোনো আয় না থাকলেও এবার সেই খাত থেকে ৫ লাখ ৫২ হাজার ৭০০ টাকা আয় দেখিয়েছেন। গতবার মৎস্য চাষ থেকে কোনো আয় ছিল না। এবার আয় দেখিয়েছেন ২০ লাখ টাকা। ব্যবসা থেকে আয় ছিল না, দেখিয়েছেন ১২ লাখ টাকা। এবার শেয়ার ব্যবসা থেকে ২০ লাখ ১০ হাজার টাকা আয় দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া খাত উল্লেখ ছাড়াই অন্যান্য উৎস থেকে ১৯ লাখ ৯ হাজার ৭০৮ টাকা আয় দেখানো হয়েছে। গতবার তাঁর ঋণ ছিল ৩২ লাখ ৪৪ হাজার ২৭৪ টাকা, এবার নেই।

অস্থাবর সম্পত্তির অংশে তাঁর স্ত্রীর নামে উপহার হিসেবে পাওয়া ৫০ ভরি ও কন্যার নামে ২১ ভরি স্বর্ণালংকারের উল্লেখ রয়েছে। আগে ব্যাংকে জমা অর্থের পরিমাণ ছিল ৫৮ লাখ ৫ হাজার ৮৭৫ টাকা। এবার তা বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ৩৮ লাখ ৫৩ হাজার ৪০৮ টাকা। গতবার স্ত্রীর নামে ১২ লাখ ৬১ হাজার ৪৭৫ টাকা জমা ছিল। এবার তা বেড়ে হয়েছে ৫৭ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। কন্যার নাম গতবার না থাকলেও এবার ২৩ লাখ ২৯ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান বলেন, এবার তিনি ঢাকার বাড়ি থেকে ভাড়া পেয়েছেন, কৃষি থেকে আয় হয়েছে। মাছ চাষ ও অন্যান্য ব্যবসা থেকে আয় হয়েছে। সঞ্চয়পত্র থেকে আয়ের টাকা মেয়ের নামে দেখানো হয়েছে। আর স্বর্ণালংকারগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবেই পাওয়া। তিনি বলেন, মানুষ তো আর বসে থাকে না। আয় বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করে।