সাগরে জাহাজকে পথ দেখাবে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট

সাগরে অবস্থানরত ৩৫ হাজারের বেশি দেশি-বিদেশি জাহাজকে উপগ্রহ সেবা দেবে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। এ জন্য আগামী রোববার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি করতে যাচ্ছে স্যাটেলাইট পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল)। সচিবালয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে এ চুক্তি সই অনুষ্ঠান হবে।

এ চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের সাগর ও স্থানীয় নদী চ্যানেলগুলোতে থাকা জাহাজগুলো আবহাওয়ার সঠিক তথ্যসহ বিভিন্ন সেবা পাবে। পুরোনো ওয়্যারলেস সেবার পরিবর্তে জাহাজগুলো পাবে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা। স্থলভাগের সঙ্গে থাকবে ২৪ ঘণ্টা যোগাযোগ। সাগরে থেকেও জাহাজের নাবিক ও যাত্রীরা স্থলভাগের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবেন। এমনকি লাইভ টেলিভিশন দেখার সুযোগও মিলবে।

বিসিএসসিএল সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ জুন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ চুক্তির সিদ্ধান্ত হয়। নৌপরিবহনসচিব আবদুস সামাদের সভাপতিত্বে বৈঠকে বিসিএসসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন ৩৫ হাজারের বেশি অভ্যন্তরীণ ও ১১০টির বেশি গভীর সমুদ্রের বিদেশি জাহাজ বাংলাদেশের জলসীমায় ঘুরে বেড়ায়।

বিসিএসসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিসিএসসিএল স্থানীয় ও বিদেশি জাহাজে কম খরচে স্যাটেলাইট সেবা দেবে। এর ফলে জাহাজগুলো নিরাপদ নৌযান-সুবিধা পাবে এবং সেগুলোতে লাইভ টেলিভিশন সম্প্রচারের সুবিধাও পাওয়া যাবে। বর্তমানে এসব জাহাজের সঙ্গে ওয়্যারলেসে যোগাযোগ করা হয়। এতে প্রায়ই যোগাযোগে বিঘ্নœঘটে। স্যাটেলাইট-সেবার পর জাহাজগুলো ২৪ ঘণ্টা স্থলভাগের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবে।

বিসিএসসিএল সূত্র জানা গেছে, দেশের প্রথম এ স্যাটেলাইট থেকে পরিষেবা নিতে বিসিএসসিএল ৪৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে চিঠি দিয়েছে। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে তারা প্রস্তাবও পেয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এটি তাদের প্রথম বৈঠক। পর্যায়ক্রমে অন্য মন্ত্রণালয় ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গেও তারা বৈঠক করবে। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হবে।

বিসিএসসিএল সূত্রে জানা গেছে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু-১-এর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে স্যাটেলাইটটি নিয়ন্ত্রণের জন্য দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন (ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা) তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে জয়দেবপুরের গ্রাউন্ড স্টেশনটিই স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণের মূল কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। আর বিকল্প হিসেবে রাখা হয়েছে রাঙামাটির বেতবুনিয়া গ্রাউন্ড স্টেশন।

গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে সফলভাবে মহাকাশে পাঠানো হয় বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট। মহাকাশে এ স্যাটেলাইটটির নির্দিষ্ট কক্ষপথ হলো ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। স্যাটেলাইটটি তৈরি করেছে ফ্রান্সের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থ্যালেস এলেনিয়া স্পেস।

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটে মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি কেইউ-ব্যান্ড ও ১৪টি সি-ব্যান্ডের। এটি তৈরিতে খরচ ধরা হয় ২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার এবং বাকি ১ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এই ঋণ দিয়েছে বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি। তবে শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা।