ভিন্নমুখী কৌশলে নির্বাচনী তৎপরতা

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন ৩০ জুলাই। সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে রাজশাহীর উন্নয়নে প্রতিশ্রুতি মিলছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনও বিভিন্ন মতবিনিময় সভায় নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তিনি রাজশাহীর উন্নয়নে তাঁর অতীত ভূমিকা তুলে ধরার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনার কথাও জানাচ্ছেন।

এই নির্বাচনে বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী সদ্য সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ভোটারদের সহানুভূতি চাইছেন। তিনি বলছেন, মামলা দিয়ে তাঁকে গত মেয়াদের অর্ধেকের বেশি সময়ই নগর ভবনের বাইরে রেখে কাজ করতে দেওয়া হয়নি।

রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর আগে এভাবে বিপরীতমুখী কৌশলে চলছে রাজশাহী সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের নির্বাচনী তৎপরতা।

রাজশাহী জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে ৩ জুলাই রাজশাহীর হজরত শাহ্ মখদুম বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন-সম্পর্কিত এক পর্যালোচনা সভা হয়। ওই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল। ওই সভায় এ এইচ এম খায়রুজ্জামানও বক্তব্য দেন। সেখানে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাইম হাসান বিমানবন্দর নিয়ে সরকারের নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সহায়তা পেলে জমি অধিগ্রহণ করে বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ করা হবে। আর সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল বলেন, হজরত শাহ্‌ মখদুম বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

একই দিন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তাঁর ফেসবুক পেজে বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার আরও একটি উপহার রাজশাহীর জন্য।’ এটি হচ্ছে অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ (ওএসএইচ) একাডেমি কাম হোস্টেল। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে দিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়, শ্রম অধিদপ্তর রাজশাহী নগরের তেরখাদিয়ায় পাঁচ একর জায়গার ওপর ‘ওএসএইচ একাডেমি কাম হোস্টেল’ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে শিল্পকারখানায় নিয়োজিত শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও পেশাগত স্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি এটি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

এমন সব প্রতিশ্রুতির বাইরে এ এইচ এম খায়রুজ্জামানও প্রতিদিনই নগরের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। শিক্ষক ও ইমামদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে তাঁদের জন্য পৃথক পল্লি গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। মহানগর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ৩০ বছরের জন্য রাজশাহীর যত উন্নয়ন দরকার, তা করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

এদিকে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেনের হিসাব অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে রাজশাহী সিটির মেয়র থাকার সময়ে তিনি মাত্র ২৬ মাস কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে প্রায় ১৩টি মামলা দেওয়া হয়েছে, যেগুলোর ১২টিই চলমান। হাজতেও থাকতে হয়েছে প্রায় সাত মাস। দুবার সাময়িক বরখাস্তও করা হয়েছে। পরে আদালতের নির্দেশে গত বছরের ৫ এপ্রিল মেয়রের চেয়ারে বসার সুযোগ পেয়েছেন।

মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, রাজশাহীর মানুষ এসব ঘটনার সাক্ষী। ভোটারদের কাছে এটা পরিষ্কার, সুযোগ পেলে তিনি রাজশাহী নগরের আশানুরূপ উন্নয়ন করতে পারতেন। এই দুরবস্থার মধ্যেই তিনি ১৭টি প্রকল্পের প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার কাজ করেছেন। কোনোটি চালু হয়েছে; কোনোটির দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। যেখানেই যাচ্ছেন, এসব ঘটনা তুলে ধরে মানুষের সহানুভূতি চাইছেন মোসাদ্দেক হোসেন। তাঁর দাবি, মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁর আহ্বানে সাড়া দিচ্ছেন।

রাজশাহী জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম বলেন, একজন মানুষকে হাত-পা বেঁধে পানিতে ফেলে দিয়ে সাঁতার কাটতে বলার মতো সদ্য বিদায়ী মেয়র মোসাদ্দেক হোসেনকে অবৈধভাবে বরখাস্ত করে, মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠিয়ে বলা হচ্ছে, তিনি উন্নয়ন করতে পারেননি। আওয়ামী লীগের এমন বক্তব্য রাজশাহীর মানুষ মেনে নেবে না। রাজশাহী বিএনপির ঘাঁটি। রাজশাহীর মানুষের সহানভূতিতেই তাঁদের প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন গতবারের চেয়ে আরও বেশি ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত হবেন।