স্ত্রীকে কটূক্তি করায় মা, খালা, ভাইকে হত্যা!

তুহিন শেখ
তুহিন শেখ

পাবনার বেড়া উপজেলায় চাঞ্চল্যকর একই পরিবারের তিন সদস্যকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত তুহিন শেখকে (২২) পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তিনি ওই পরিবারেরই বড় ছেলে। শনিবার তিনি এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার ব্যাপারে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

শুক্রবার খুলনা থেকে পুলিশ তুহিনকে গ্রেপ্তার করলেও শনিবার সাংবাদিকদের কাছে তা প্রকাশ করা হয়। তুহিনকে গ্রেপ্তারের বিষয় নিয়ে পুলিশ শনিবার বেড়া থানায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বেড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিয়া মোহাম্মদ আশিষ বিন হাছান। এ সময় বেড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফ্ফর হোসেন উপস্থিত ছিলেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাংবাদিকদের জানান, স্ত্রীকে কটূক্তি করার কারণেই তুহিন বুধবার (৪ জুলাই) ভোরে মা, ছোট ভাই ও আপন খালাকে একাই নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেন। ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে তাঁরা জানান, গ্রেপ্তারের পর তুহিন পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আদ্যোপান্ত বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়া একই কথা তুহিন শনিবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও বলেছেন।

তুহিনের বরাত দিয়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আট-নয় মাস আগে তুহিন একই গ্রামের দশম শ্রেণির ছাত্রী রুণা আক্তারকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। তাঁদের বিয়ের ব্যাপারটি দুই পরিবারের কেউই ভালোভাবে মেনে নেয়নি। তুহিন ব্যাটারি ভাঙার কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন। কিন্তু মাস দু-এক আগে তাঁর টাইফয়েড জ্বর হলে তিনি কাজ করা বন্ধ করে স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর নিজের বাড়িতে থাকতেন। একই বাড়িতে তুহিনের খালা মরিয়ম খাতুনও থাকতেন। তুহিন কোনো কাজ না করায় এবং ভালোবেসে বিয়ে করায় প্রায়ই তুহিনের মা ও খালা তুহিনকে ও তাঁর স্ত্রীকে গালমন্দ করতেন। মঙ্গলবার (৩ জুলাই) রাতে এ নিয়ে মা-খালা স্ত্রী রুণাকে গালমন্দ ও কটূক্তি করলে তুহিন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ঘটনার দিন সারা রাত নির্ঘুম কাটিয়ে ভোর চারটার দিকে তুহিন চাপাতি হাতে নিয়ে তাঁর খালা মরিয়ম খাতুনকে (৪৫) ডেকে তোলেন। তুহিনের উদ্দেশ্য ছিল খালাকে ভয় দেখানো, যাতে তিনি স্ত্রী রুণাকে নিয়ে আর কোনো কটূক্তি না করেন। কিন্তু খালা ঘুম থেকে উঠে উঠোনে এসে তুহিনের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় খালা মরিয়ম স্ত্রী রুণা সম্পর্কে নানা ধরনের কটূক্তি করলে তুহিন চাপাতি দিয়ে তাঁকে উপর্যুপরি কুপিয়ে সেখানেই হত্যা করেন। বিষয়টি টের পেয়ে মা বুলবুলি খাতুন (৪০) ও ছোট ভাই তুষার (১০) বাধা দিতে এলে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে তুহিন ওই দুজনকেও একই স্থানে কুপিয়ে হত্যা করেন। স্ত্রী রুণা এ সময় এগিয়ে এলে তুহিন চাপাতি নিয়ে তাঁর দিকেও তেড়ে যান। এতে রুণা পালিয়ে বাইরে গিয়ে লোকজন ডেকে আনেন। ততক্ষণে তুহিন পালিয়ে যান।

ওসি মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, ‘পারিবারিক কলহের জের ধরে এমন একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে যেতে পারে তা ভাবাই যায় না। তুহিন একাই এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য সম্পূর্ণ উন্মোচিত হয়েছে।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিয়া মোহাম্মদ আশিষ বিন হাছান বলেন, ‘হত্যাকাণ্ড ঘটানোর ইচ্ছা তুহিনের ছিল না। কিন্তু তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে তুহিন হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটান।’