চিকিৎসকের সাদা পোশাক রোগীর সন্তুষ্টি বাড়ায়

গবেষণায় বলা হয়েছে, চিকিৎসকের পোশাক রোগীকে চিকিৎসকের ওপর আস্থা রাখায় উৎসাহিত করে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, চিকিৎসকের পোশাক রোগীকে চিকিৎসকের ওপর আস্থা রাখায় উৎসাহিত করে।
>
  • যুক্তরাষ্ট্রে ৪ হাজার ৬২ জন রোগীকে নিয়ে গবেষণা
  • গবেষণা প্রবন্ধটি ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশ
  • চিকিৎসকদের পোশাক রোগীর সন্তুষ্টিতে প্রভাব ফেলে
  • রোগীদের ধারণা, অ্যাপ্রোন পরা চিকিৎসকেরা আস্থার যোগ্য

বিশ্বের প্রায় সব দেশেই চিকিৎসাসেবা নিয়ে রোগীদের মধ্যে কমবেশি অভিযোগ ও অসন্তুষ্টি রয়েছে। কিন্তু চিকিৎসকদের পোশাক কি কখনো রোগীদের অসন্তুষ্টির কারণ হতে পরে? যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, চিকিৎসকদের সাদা পোশাক (অ্যাপ্রোন) রোগীদের সন্তুষ্টিতে ভূমিকা রাখে।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাটি হয়েছে ৪ হাজার ৬২ জন রোগীকে নিয়ে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বেশি রোগী বলেছেন, চিকিৎসকদের পোশাক তাঁদের সন্তুষ্টিতে প্রভাব ফেলে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৫৫ শতাংশ এবং বহির্বিভাগে সেবা নেওয়া ৪৪ শতাংশ রোগী সাদা পোশাক পরা অবস্থাতেই চিকিৎসকদের দেখতে চান। গবেষণা প্রবন্ধটি গত ৭ জুন বিশ্বখ্যাত চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে ছাপা হয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, রোগীদের ধারণা, সাদা পোশাকে থাকা চিকিৎসকদের জ্ঞান বেশি, আস্থার যোগ্য, সেবাপরায়ণ। সাদা পোশাকে থাকা চিকিৎসকদের সঙ্গে সহজে কথা বলা যায়। রোগীরাও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের এই গবেষণায় পাওয়া ফলাফলের সূত্র ধরে গত ৮ জুন দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক ইউনিটের ১১৫ নম্বর ওয়ার্ডের রোগী মোহাম্মদ লিটনের সঙ্গে কথা হয়। পুরান ঢাকার বাসিন্দা লিটন দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওয়ার্ডে চিকিৎসকেরা ঢুকলেই চেনা যায়। তাঁদের গায়ে সাদা গাউন বা অ্যাপ্রোন থাকে, গলায় স্টেথোস্কোপ থাকে। দেখলে ভালো লাগে।’

হাসপাতালের ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডে ‘কর্তব্যরত চিকিৎসকের’ জন্য নির্ধারিত জায়গায় এক যুবককে বসে থাকতে দেখা যায়। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি চিকিৎসক নন বলে জানান। এরপর সার্জারি বিভাগে ১১১ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে একজন চিকিৎসককে পাওয়া যায়। তিনি অ্যাপ্রোন পরে ছিলেন না। ওই চিকিৎসক বলেন, অ্যাপ্রোন থাকলে চিকিৎসক ভালো সেবা দেবেন আর অ্যাপ্রোন না থাকলে সেবার মান খারাপ হবে, বিষয়টি এমন নয়।

চিকিৎসকের গায়ে অ্যাপ্রোন থাকার প্রয়োজনীয়তার কথা বললেন হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজারের কক্ষে বসে থাকা দুজন জ্যেষ্ঠ নার্স। তাঁরা বললেন, ঢাকা মেডিকেলে কয়েক হাজার রোগী থাকেন। রোগীদের সঙ্গে থাকেন অনেক আত্মীয়স্বজন। অ্যাপ্রোন পরা না থাকলে তাঁদের মধ্যে কে চিকিৎসক, তা বুঝতে সমস্যা হয়। হঠাৎ বিপদে রোগী বা রোগীর স্বজনেরা কার সঙ্গে কথা বলবেন, বুঝে উঠতে পারেন না। অ্যাপ্রোন পরা মানুষের উপস্থিতি রোগীর মনে সাহস জোগায়।

গায়ে থাকবে অ্যাপ্রোন, হাতে বা গলায় স্টেথোস্কোপ—চিকিৎসকদের এমন চেহারায় দেখতে অভ্যস্ত এ দেশের মানুষ। তবে এ নিয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আবু শফি আহমেদ আমিন প্রথম আলোকে বলেন, নার্সদের মতো চিকিৎসকদের পোশাকবিধি বা ড্রেস কোড নেই। সাদা পোশাক পরা পেশাজীবী চিকিৎসকদের ঐতিহ্য। সাদা পোশাকে চিকিৎসকের উপস্থিতি রোগীকে আশ্বস্ত করে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই গবেষণা ফলাফলকে বিবেচনায় নিতে পারে।

গবেষণার ফল
যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল স্কুলের গবেষকেরা দেশটির শীর্ষস্থানীয় ১০টি হাসপাতালের রোগীদের নিয়ে গবেষণা করেন। ২০১৫ সালের ১ জুন থেকে ২০১৬ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত তাঁরা রোগীদের কাছ থেকে সেবাসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য নেন। মোট ৪ হাজার ৬২ রোগীর মতামত সংগ্রহ করেন গবেষকেরা। রোগীদের ৬৫ শতাংশ ছিলেন পুরুষ। মোট রোগীর ৬৪ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। বাকি ৩৬ শতাংশ ছিলেন বহির্বিভাগের রোগী। গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল, রোগীর অভিজ্ঞতার সঙ্গে চিকিৎসকের পোশাক-পরিচ্ছদের সম্পর্ক খতিয়ে দেখা।

হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের ৫৫ শতাংশ বলেছে, সেবা দেওয়ার সময় চিকিৎসকের আনুষ্ঠানিক সাদা পোশাক পরা উচিত। জরুরি বিভাগের রোগীদের ৪৪ শতাংশ একই কথা বলেছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, চিকিৎসকদের পোশাক-পরিচ্ছদ উৎকর্ষ চিকিৎসাসেবার বিকল্প নয়। তবে চিকিৎসকের পোশাক সেবা সম্পর্কে রোগীকে ধারণা দেয় এবং চিকিৎসকের ওপর আস্থা রাখায় উৎসাহিত করে।

গবেষণার এই ফলাফলকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি রশীদ-ই-মাহবুব। তিনি বলেন, চিকিৎসককে সাদা পোশাকে দেখলে রোগীর আস্থা বাড়ে।