সংসদে নারী আসন আরও ২৫ বছর

জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন আরও ২৫ বছর থাকবে। সংরক্ষিত আসনের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। রোববার জাতীয় সংসদে সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনী বিল সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়।

তবে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা বাড়ানো হয়নি। নারী আসন থাকছে ৫০টি।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিভক্তি ভোটে বিলটি পাস হয়। বিল পাসের পক্ষে ভোট পড়ে ২৯৮টি। বিপক্ষে কেউ ভোট দেননি। সংবিধান সংশোধন বিল পাস হতে সময় লেগেছে প্রায় দুই ঘণ্টা। সংবিধান সংশোধন করতে সংসদের মোট সদস্যসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোট লাগে।

সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে ‘সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধন) বিল-২০১৮’ বিবেচনার জন্য গ্রহণ করার প্রস্তাব করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী, কণ্ঠভোটের পাশাপাশি বিভক্তি ভোটের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন বিল পাস হয়। কণ্ঠভোটে পাস হওয়ার পর বিলের দফাগুলো বিভক্তি ভোটে দেওয়া হয়। পরে পাঁচটি লবিতে গিয়ে সংসদ সদস্যরা ভোট দেন। বিলের দফায় পক্ষে ২৯৫টি ভোট পড়ে। বিপক্ষে কোনো ভোট পড়েনি।

বিলের ওপর জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব দেন জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিন, ফখরুল ইমাম, রওশন আরা মান্নান, নূরুল ইসলাম মিলন, কাজী ফিরোজ রশীদ, নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী, আবদুল মুনিম চৌধুরী ও স্বতন্ত্র সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজী।

বিলটি বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দেন স্বতন্ত্র সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী, জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিন, ফখরুল ইমাম, রওশন আরা মান্নান, নূরুল ইসলাম মিলন, কাজী ফিরোজ রশীদ, আবদুল মুনিম চৌধুরী। জাতীয় পার্টির নূরুল ইসলাম ওমর দুটি প্রস্তাব দিলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেন।
পরে এসব প্রস্তাব ভোটে না নাকচ হয়ে যায়।

বিলের ওপর সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম ও স্বতন্ত্র সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী। সেগুলোও কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।

পরে আইনমন্ত্রী সংবিধান সংশোধন বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে প্রথমে স্পিকার তা কণ্ঠভোটে দেন। এরপর বিভক্তি ভোটে বিলটি পাস হয়। এতে সংবিধানের ৬৫ (৩) অনুচ্ছেদে সংশোধনী আনা হলো।

সংবিধানের সংশোধিত ৬৫ (৩) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধন) আইন, ২০১৮ প্রবর্তনকালে বিদ্যমান সংসদের অব্যবহিত পরবর্তী সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ হইতে শুরু করিয়া ২৫ বৎসর কাল অতিবাহিত হইবার অব্যবহিত পরবর্তীকালে সংসদ ভাঙ্গিয়া না যাওয়া পর্যন্ত পঞ্চাশটি আসন কেবল মহিলা সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত থাকিবে এবং আইনানুযায়ী পূর্বোক্ত সদস্যদের দ্বারা সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির ভিত্তিতে একক হস্তান্তরযোগ্য ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হইবেন…।’

এর আগে বিলের ওপর আলোচনায় স্বতন্ত্র সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ৬০ বা ৭০-এর দশকে এই বিধানের যৌক্তিকতা ছিল। তখন নারীর বঞ্চিত ছিলেন। এখন সেই অবস্থা নেই। এখন প্রয়োজনে নারীদের জন্য আলাদা ১০০টি আসন করে সেখানে সরাসরি নির্বাচন দেওয়া যেতে পারে। তিনি বলেন, এখন যেভাবে নারীদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে তাতে সংবিধানের ২৮(৪) ও ৬৬ (১) দফার লঙ্ঘন হবে। কারণ, এখানে সব নারী সাংসদ হওয়ার সুযোগ পাবেন না। শুধু দলীয় নারীরা সুযোগ পাবেন। অরাজনৈতিক নারীরা প্রার্থী হতে পারবেন না। এতে সংবিধানের ২৮ (৪) ধারা লঙ্ঘন হবে।

তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, এই বক্তব্য সঠিক নয়। ৬৫ ধারার উপধারা তিন অনুযায়ী নারীদের ৩০০ আসনে নির্বাচন করতে কোনো বাধা নেই। সবাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। কাউকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। এই ৫০টি আসন সংরক্ষিত থাকবে।

জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, নূর ই হাসনা লিলি চৌধুরী ও নুরুল ইসলাম ওমর সংরক্ষিত আসনের মেয়াদ ২৫ বছর না করে ১০ বছর করার প্রস্তাব দেন। তাঁরা মনে করেন, ২৫ বছরে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে। নারীরাও এগিয়ে যাবেন।

সংরক্ষিত আসনের নূর ই হাসনা লিলি চৌধুরী বলেন, নারীরা যোগ্য হলেও অনেক সময় মনোনয়ন দিতে চায় না দলগুলো। মনে করে নারীদের অর্থবিত্ত নেই। টাকার বিনিময়ে রসগোল্লা খেয়ে ভোট দেয়। পরে রসগোল্লার দাম তুলে নেয়। তিনি বলেন, সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের উপজেলা-জেলা পরিষদ থেকে কোথাও কোনো দাম নেই। কোনো কাজ নেই।