মাঠছাড়া হওয়ার শঙ্কায় বিএনপি

আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হওয়ার আগেই নির্বাচনী মাঠে টিকে থাকতে পারা নিয়ে রাজশাহীতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে দলটির চারজন নেতা-কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে। বিএনপির নেতাদের দাবি, খুলনার মতো রাজশাহীতেও ভোটের আগেই সিটি করপোরেশন এলাকার নেতা-কর্মীদের মাঠছাড়া করার জন্য পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।

দলীয় ও পারিবারিক সূত্র জানায়, গত শনিবার মধ্যরাতে শহরের কাশিয়াডাঙ্গা থানার পুলিশ ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল হক ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আমিনুল হককে আটক করে। তবে তাঁদের কোন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত তাঁদের স্বজনদের বলেনি পুলিশ।

তাঁদের মধ্যে আমিনুল ক্রীড়াবিদ। এখন শহরের একটি শরীরচর্চা কেন্দ্রের (জিম) প্রশিক্ষক। তাঁর স্ত্রী তামান্না শিরিন প্রথম আলোকে বলেন, আমিনুলের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাসার ফটক থেকে পুলিশ আমিনুলকে আটক করে নিয়ে যায়। তিনি গতকাল দিনভর থানায় ছিলেন, কিন্তু স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি পুলিশ। তবে ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি-দলীয় কাউন্সিলর মাহবুব সাইদ হাজতে গিয়ে আমিনুলকে দেখে এসেছেন। হাজতে আমিনুলসহ মোট তিনজন ছিলেন বলে তামান্নাকে জানিয়েছেন তিনি।

এ ছাড়া গতকাল রোববার বিএনপির দুজন কর্মী রায়হান ইসলাম (২৩) ও মো. হাবিবুর রহমানকে (৩৪) কাশিয়াডাঙ্গা থানার পুলিশ এবং মো. মোখলেছুর রহমান (৪১) নামের এক জামায়াত কর্মীকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গ্রেপ্তার করেছে।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই তিনজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তবে কী মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেটা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি। এ ছাড়া পুলিশের বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম ও আমিনুল হকের নাম নেই।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র এবং জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. ইফতে খায়ের আলম প্রথম আলোকে বলেন, ওই দুজনকে আটক করা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন। রাজনৈতিক কারণে কাউকে আটক করা হয়নি। নাশকতাবিরোধী পুলিশের নিয়মিত গ্রেপ্তার অভিযান চলছে।

বিএনপির নেতারা বলছেন, নুরুল ও আমিনুলকে কোন মামলায় গ্রেপ্তার দেখাবে, পুলিশ গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ঠিক করতে পারেনি। বিগত আন্দোলনের সময় নাশকতার কোনো মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হতে পারে। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে রাজশাহী শহরে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় কাশিয়াডাঙ্গা থানা ছিল না। থানাটি হয়েছে চলতি বছরের ১ মার্চ। ফলে তাঁদের কোন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে, তা নিয়ে পুলিশই সমস্যায় রয়েছে।

কাশিয়াডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলামের সঙ্গে গতকাল দিনভর চেষ্টা করা হয়। বিকেলে একবার ফোন ধরে বলেন, তিনি পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে বৈঠক করছেন। থানায় গেলে ডিউটি অফিসার বলেন, বিএনপির দুজনকে আটকের বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না। সন্ধ্যা সাতটার পর ওসি থানায় ফিরবেন। সন্ধ্যা সাতটার পর ওসি রবিউল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। তবে সন্ধ্যা সাতটার পর ওসি আর ফোন ধরেননি।

গ্রেপ্তার-আতঙ্কের বিষয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল প্রথম আলোকে বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় ৭ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের বৈঠকে ছিলেন নুরুল ইসলাম ও আমিনুল। এতে আমিনুল বক্তৃতাও করেছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কাশিয়াডাঙ্গা থানায় কোনো মামলা নেই। তিনি অভিযোগ করেন, খুলনার মতো এখানেও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মাঠছাড়া এবং নির্বাচনী প্রচার শুরুর আগেই ভয়ের পরিবেশ তৈরি করতে সরকারি দল পুলিশ দিয়ে আটক অভিযান শুরু করেছে।

এই অভিযোগের বিষয়ে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘খুলনায় কী হয়েছে, আমার জানা নেই। তবে রাজশাহীতে ওই পরিস্থিতি নেই। বিএনপির নেতা-কর্মীদের জেলে রেখে আমরা ভোটে জিততে চাই না। আমরা মাঠে খেলে গোল দিয়ে জিততে চাই।’

আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হবে। দুই প্রধান দলের প্রার্থী প্রচারসামগ্রী তৈরিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি শুরু করেছেন। আজ সোমবার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। এ রকম একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরির আগমুহূর্তে বিএনপির চার নেতা-কর্মীকে কোনো মামলা, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই আটক করার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক। তাঁরা এটাকে খুলনার ঘটনার পুনরাবৃত্তির আভাস হিসেবে দেখছেন।