আ.লীগের ভয় জামায়াত, বিএনপির চার দুশ্চিন্তা

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খায়রুজ্জামান, বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খায়রুজ্জামান, বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন
>
  • আওয়ামী লীগ বলছে, গত মেয়র নির্বাচনে অপপ্রচার চালিয়েছিল জামায়াত।
  • খুলনা ও গাজীপুরের সিটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ভাবাচ্ছে বিএনপিকে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে চারটি বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে বিএনপি। অন্যদিকে নির্বাচনী মাঠ নিয়ন্ত্রণে থাকার পরও আওয়ামী লীগ বলছে, এখন তাদের ভয় বিএনপির জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে। যদিও জামায়াত বলছে, তারা রাজশাহীতে নির্বাচন করছে না। তাই তাদের নিয়ে শঙ্কা অমূলক।

রাজশাহীতে ২০-দলীয় জোটের মেয়র পদপ্রার্থী বিএনপির মহানগর কমিটির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তিনি চারটি বিষয়কে দুশ্চিন্তার কারণ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। সেগুলো হলো-এক. ভোটের দিন ও তার আগ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ প্রশাসনের ভূমিকা কেমন হবে। তারা নিয়মিত অভিযানের নামে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি করে কি না। দুই. নির্বাচন কমিশন (ইসি) কতটা নিরপেক্ষ থাকবে এবং তারা পুলিশের বাড়াবাড়ি নিয়ন্ত্রণে শক্ত ভূমিকা পালন করবে কি না। তিন. যাঁরা ভোট গ্রহণ করবেন সেই প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং কর্মকর্তা হিসেবে কারা নিয়োগ পাবেন। কীভাবে তাঁদের নিরেপক্ষতা নিশ্চিত করা হবে। চার. ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী এজেন্টদের কেন্দ্রে নিরাপদে প্রবেশ করানো।

মোসাদ্দেক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, খুলনা ও গাজীপুরের সিটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে তাঁদের এসব নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে। তাঁর দাবি, এখন পর্যন্ত রাজশাহীতে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়নি। দুই মাস আগে থেকেই আওয়ামী লীগের লোকজন বিএনপির কর্মীদের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছেন।

অবশ্য বিএনপি যেসব দুশ্চিন্তার কথা বলছে, সেসব অমূলক বলে ভাবছে আওয়ামী লীগ। আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর আগেই মাঠে একচ্ছত্র প্রভাব তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ। ভোটের দিন পর্যন্ত এটা ধরে রাখতে চান দলের মেয়র পদপ্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের ভয় জামায়াতকে নিয়ে। কারণ, তারা খুব সুসংগঠিত। তাদের অর্থনৈতিক সামর্থ্য আছে এবং অপপ্রচারে দক্ষ। তারা গত নির্বাচনে অপপ্রচার করেছিল।

খায়রুজ্জামান বলেন, ‘জামায়াতের মহিলাদের বেশি ভয় পাই। তারা ঘরে ঘরে গিয়ে অপপ্রচার করে। তবে এবার অপপ্রচারের বিষয়ে পুলিশকে অ্যালার্ট (সতর্ক) করা হয়েছে। পাড়ায় পাড়ায় ছেলেদের বলে দেওয়া হয়েছে পাহারা দিতে।’

তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর এমন ভয়ের কোনো কারণ দেখছেন না রাজশাহী মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির আবু মোহাম্মদ সেলিম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তো রাজশাহীতে নির্বাচনই করছি না।’

বিএনপির নেতারা বলছেন, জামায়াত বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে আছে। শিগগিরই প্রচার চালাবেন দুই দলের নেতারা। এ বিষয়ে মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, ‘বিএনপি তার জায়গা থেকে এসব কথা বলছে। তারা কি বলতে পারবে আমরা তাদের সঙ্গে কোনো বৈঠক করে সিদ্ধান্ত দিয়েছি।’

রাজশাহী মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি সিদ্দিক হোসেনকে স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী করার ঘোষণা দিয়ে শহরে পোস্টারও লাগানো হয়েছিল। কিন্তু পরে আর মনোনয়নপত্র তোলেনি জামায়াত। তবে ১৪টি সাধারণ ও দুটি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে জামায়াত-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। এসব ওয়ার্ডে জোটসঙ্গী বিএনপিরও কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগই বর্তমান কাউন্সিলর। শেষ পর্যন্ত কাউন্সিলর নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়নি। দুটি দলই বলছে, কাউন্সিলর পদ যার যার তার তার।

লিটনের ফোনে বিএনপি নেতাদের নম্বর!
রাজশাহী বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা প্রথম আলোকে জানান, তাঁদের ভেতরে নতুন আলোচনার বিষয় হচ্ছে, আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী খায়রুজ্জামানের মুঠোফোনে এখন বিএনপির নেতাদের নম্বর বেশি। এমন কথা বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেনও শুনেছন বলে স্বীকার করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপির অনেক নেতাকে ফোন করে নানা প্রলোভন দেওয়া হচ্ছে।