ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী তোলে গণপরিবহন

মহাখালীতে রেললাইনের ওপর লেগুনা দাঁড় করিয়ে ওঠানো হচ্ছে যাত্রী।  প্রথম আলো
মহাখালীতে রেললাইনের ওপর লেগুনা দাঁড় করিয়ে ওঠানো হচ্ছে যাত্রী। প্রথম আলো

ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর সোয়া ১২টা। বিমানবন্দর স্টেশন থেকে মহাখালী রেলক্রসিং হয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের দিকে যাচ্ছিল একটি ট্রেন। মহাখালী রেলক্রসিং অতিক্রম করার ৩০ সেকেন্ড আগে রেলক্রসিংয়ের ওপর দিয়েই হুট করে একটি লেগুনা ইউ টার্ন নেয়। লেগুনাচালকের এমন কাণ্ডে আশপাশের লোকেরা চিৎকার করে ওঠেন। নিশ্চিত ভয়াবহ বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে লেগুনার যাত্রীরা দ্রুত নেমে পড়েন। এ সময় দায়িত্বরত এক ট্রাফিক পুলিশ লেগুনাটি দ্রুত বিপৎসীমার বাইরে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মহাখালী রেলক্রসিংয়ে গিয়ে এমন চিত্রের দেখা মেলে। বিভিন্ন যানবাহনের চালকদের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করে দেখা গেছে, একটি ট্রেন ক্রসিং অতিক্রম করার ২০-৩০ সেকেন্ড আগেও অনেক পরিবহন ঝুঁকি নিয়ে রেললাইন পার হচ্ছে। দায়িত্বরত রেলওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও তাঁদের কেউ তোয়াক্কা করছে না। অনেক সময় ট্রেন আসার আগের মুহূর্তেও বাস এবং লেগুনা রেলক্রসিংয়ের ওপর দাঁড়িয়েই যাত্রী ওঠায়। যাত্রীরাও ঝুঁকি নিয়ে গণপরিবহনে ওঠে।

দুপুর সাড়ে ১২টায় কমলাপুরগামী একটি ট্রেন আসার সময় রেলক্রসিংয়ে প্রতিবন্ধক নামিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিবন্ধকটি নামানোর শেষ মুহূর্তে উল্টো পথে একটি প্রাইভেট কার রেলক্রসিংয়ের ওপর বিপৎসীমার মধ্যে ঢুকে পড়ে। তখন ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য দৌড়ে গিয়ে গাড়িটিকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে প্রতিবন্ধক ঘেঁষে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করে দেন। খানিক বাদে কমলাপুর থেকে মহাখালী হয়ে একটি ট্রেন যাওয়ার সময় ফের সিগন্যাল দেওয়া হয়। এরপরও দুটি লেগুনা রেললাইনের ওপর দাঁড়িয়ে যাত্রীদের ডাকাডাকি করে তোলার চেষ্টা করছিল। ট্রেনটি আসার খানিক আগে লেগুনা দুটি বিপৎসীমার বাইরে চলে যায়।

এ সময় মহাখালী থেকে ফার্মগেটমুখী ৬ নম্বর বাসও হঠাৎ করে প্রতিবন্ধক নামার মুহূর্তে রেলক্রসিংয়ের ভেতর প্রবেশ করে। ট্রেনটি মহাখালীতে পৌঁছার ১০ সেকেন্ড আগে কোনোমতে রেলক্রসিং অতিক্রম করে বিপৎসীমার বাইরে চলে যায়।

সেখানে স্থানীয় লোকজন বলেন, ঝুঁকি নিয়ে মহাখালী রেলক্রসিং পারাপারে এমন চিত্র প্রতিনিয়ত ঘটছে। যাত্রীদের গন্তব্যে দ্রুত পৌঁছানোর জন্য হুড়াহুড়ি আর বেশি ট্রিপ মারার প্রবণতা থেকেই সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে এমন করা হয় বলে মনে করছেন তাঁরা।

সেখানে তিন ঘণ্টা অবস্থান করে আরও দেখা গেছে, মহাখালী থেকে আগারগাঁও হয়ে ৬০ ফুট, গুলশান-বাড্ডা লিংক রোড থেকে শিয়া মসজিদ, মহাখালী থেকে মোহাম্মদপুরগামী লেগুনা রেলক্রসিংয়ের ওপর অবস্থান করেই যাত্রী ওঠানামা করছে। লেগুনার পাশাপাশি বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসও রেলক্রসিংয়ের ওপর এসেই যাত্রী ওঠানামা করছে। অথচ এসব পরিবহন রেলক্রসিং অতিক্রম করেও যাত্রী ওঠানামা করতে পারে। ট্রেন মহাখালী রেলক্রসিংয়ে পৌঁছার কয়েক সেকেন্ড আগেই বিপৎসীমার বাইরে চলে যাচ্ছে।

এমনও দেখা গেছে, একটি বাস বা লেগুনা যখন রেলক্রসিং অতিক্রম করে, তখন অনেক যাত্রী ক্রসিং পার হওয়ার আগেই তাড়াহুড়া করে পরিবহনে ওঠার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। তৌহিদুর রহমান নামে এমন এক যাত্রী বলেন, দ্রুত গুলিস্তান যেতে হবে তাঁর। তাই তাড়াহুড়া করে বাসে উঠতে গিয়ে রেলক্রসিংয়ের ওপরই তিনি ঝুঁকি নিয়ে উঠছেন তা ভুলে গেছেন।

রেলওয়ের এক কর্মচারী বলেন, লেগুনাগুলোর চালকেরা কাউকে মানেন না। খুব সমস্যা করেন। মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে।

মহাখালী থেকে মোহাম্মদপুরগামী লেগুনার এক চালকের কাছে ঝুঁকি নিয়ে ইউ টার্ন নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে ইউ টার্ন না নিয়ে অনেক দূর ঘুরে রাস্তার উল্টো পাশে আসতে হয়। তাই ঝুঁকির কথা জেনেও ইউ টার্ন নেন তিনি।

ডিএমপির ট্রাফিক উত্তর সূত্র জানায়, মহাখালী রেলক্রসিংয়ে নিয়ম ভেঙে ইউ টার্ন করার কারণে নিয়মিত মামলা দেওয়া হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষ গাড়ি রেকারে দেওয়া হয়। মহাখালী রেলক্রসিং থেকে প্রতিদিন গড়ে অন্তত পাঁচটি গাড়ি রেকার করা হয়।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ মহাখালী ট্রাফিক জোনের পরিদর্শক সালাহউদ্দীন প্রধান প্রথম আলোকে বলেন, রেলক্রসিংয়ের ওপর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে তাঁরা মামলা দিয়ে থাকেন। এটা চলমান প্রক্রিয়া। দুর্ঘটনারোধে যাত্রীদের সচেতনতা জরুরি বলেও মনে করেন তিনি।