কয়লার অবৈধ ব্যবসায় ভোগান্তি

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কয়লার মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে স্কুলের িশক্ষার্থীরা।  ছবি: প্রথম আলো
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কয়লার মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে স্কুলের িশক্ষার্থীরা। ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীপারে কয়লার অবৈধ ব্যবসা চলছে। বাতাসে কয়লার ধুলা ওড়ে। প্রখর রোদে কয়লায় আগুন জ্বলে। পাশের স্কুলে শিশুদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে নষ্ট হচ্ছে আশপাশের পরিবেশ। সেখান দিয়ে চলাচলকারী মানুষকেও দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন রূপগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি আবদুল হামিদ ভূঁইয়া।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল প্রকল্পের কাছে রূপগঞ্জের কাঞ্চন সেতুর পাশেই কয়লা ও পাথরের ব্যবসা চলছে। রাজউক গত মে মাসে দখলদারদের ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার নোটিশ দিলেও লাভ হয়নি। বর্তমানে ব্যবসা আরও সম্প্রসারিত হয়েছে।  

গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, কাঞ্চন পৌরসভার ব্রাহ্মণখালী এলাকার সড়ক ও শীতলক্ষ্যা নদীপারের অন্তত চার একর জায়গা দখল করা হয়েছে। সেখানে স্তূপ করে কয়েকটি সারিতে কয়লা রাখা হয়েছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় কালো পাহাড়। চারদিকে কয়লার ধুলা উড়ছিল। কিছু শ্রমিক ঝুড়িতে করে কয়লা স্তূপ করছিলেন।

কয়লার স্তূপের প্রায় ২০০ গজ দূরে তৈরি জেটিতেও রাখা কয়লা-পাথর। জেটির কাছে তিনটি বড় কার্গো ভেড়ানো। সকালে কয়লা নামানো হয়েছে। কিছু শ্রমিক জেটি থেকে কয়লা নামানোর কাজে ব্যস্ত। সেখানেও কয়লার ধুলা উড়ছে। জেটির বিপরীত দিকে পিতলগঞ্জ ব্রাহ্মণখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের সামনের দূর্বাঘাস কালো হয়ে আছে। বাতাসে ভ্যাপসা গন্ধ। জানা যায়, স্কুলে ২৭২ জন শিক্ষার্থী। তবে কয়লার ধুলার কারণে সবাই নিয়মিত আসে না। ধুলায় শিক্ষার্থীরা মাঝেমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মঞ্জুর প্রথম আলোকে বলেন, যেখানে কয়লা ও পাথর রাখা হয়েছে তার চেয়ে বিদ্যালয়টি নিচু জায়গায়। কয়লার ময়লা পানি বিদ্যালয়ের আঙিনায় জমে থাকে। তিনি বলেন, ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার খুবই ক্ষতি হচ্ছে। কয়লা ব্যবসায়ীদের অনেক বোঝানোর পরও তাঁরা কোনো কথা শোনেননি। শুধু বিদ্যালয় নয়, কয়লা ও পাথরের ব্যবসার কারণে চারদিকের পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। এ ছাড়া এলাকার জনতা উচ্চবিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীরা দূষণে ভোগান্তি শিকার হচ্ছে। 

 পূর্বাচল ৪ নম্বর সেক্টরের ২০টি সড়কের মধ্যে বেশির ভাগ সড়কই বেহাল। আশপাশের দোকানিরা জানান, এসব সড়কপথে কয়লাবাহী ট্রাক বিভিন্ন ইটভাটা ও অন্যান্য এলাকায় যায়। দেখা যায়, নদীপারের ছোট সড়কটি কয়লার ভাঙা আবর্জনায় বেহাল। সড়কের পাশেই সরকারি জমিতে অন্তত ৩০টি ছোট তাঁবু খাটানো। কয়লার শ্রমিকেরা সেখানে রাত যাপন করেন।

স্থানীয় দোকানি ও বিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষক জানান, প্রখর রোদে মাঝেমধ্যে কয়লার স্তূপে আগুন ধরে যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। নদীপারে ঘুরতে আসা প্রবীণ আবদুর রশিদ বলেন, এসব দেখলে মনে হয় দেশে যেন আইন নেই।  

রূপগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি আবদুল হামিদ ভূঁইয়া ও তাঁর লোকজন কয়লার বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল হামিদ বলেন, একটি কোম্পানির হয়ে কাজ করছেন তিনি। তবে সুনির্দিষ্ট করে কোম্পানিটির নাম না বলে তিনি জানান, ব্যবসাটি তিনিই সামাল দিচ্ছেন। কয়লার ব্যবসার কারণে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না বলে দাবি করে তিনি বলেন, রাজউকের অনুমোদন নিয়েই এ ব্যবসা চলছে। 

যোগাযোগ করা হলে রাজউকের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কয়লা ব্যবসার কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। বরং অবৈধ ব্যবসায়ীদের জায়গা ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁরা আমলে নিচ্ছেন না।