ফুটপাতে বসতঘর

সদ্য টাইলস বসানো ফুটপাতে রীতিমতো সংসার পেতেছে একটি পরিবার। গতকাল মিরপুর ২ নম্বর সেকশনের হাজি সড়ক থেকে তোলা ছবি।  প্রথম আলো
সদ্য টাইলস বসানো ফুটপাতে রীতিমতো সংসার পেতেছে একটি পরিবার। গতকাল মিরপুর ২ নম্বর সেকশনের হাজি সড়ক থেকে তোলা ছবি। প্রথম আলো

একদিকে ফুটপাতে চলছে টাইলস বসানোর কাজ, অন্যদিকে সদ্য টাইলস বসানো ফুটপাত দখল করে বসেছে দোকান-রিকশার গ্যারেজ। কেউ আবার ফুটপাতেই ঘর তুলে সংসার পেতেছেন। এ চিত্র মিরপুর ২ নম্বর সেকশনের হাজি সড়কের দুই পাশের ফুটপাতের।

গত মঙ্গলবার সড়কটির রাইনখোলা-শিয়ালবাড়ী মোড় অংশ ঘুরে দেখা যায়, পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন কার্যালয়ের সামনের ফুটপাতে টাইলস বসানো হচ্ছে। অন্যদিকে কাজ শেষ হওয়া অংশে চায়ের দোকান। আড়াআড়ি করে পেতে দেওয়া হয়েছে বেঞ্চ। চলছে জমজমাট বেচাকেনা। কোথাও আবার ফুটপাতে বসানো চুলায় চলছে হোটেলের রান্না।

কমার্স কলেজের উল্টো দিকের ফুটপাত দখল করে রান্নার কাজ সারছিল মোল্লা বিরিয়ানি হাউস। ফুটপাত দখল করা ঠিক হয়েছে কি না, জানতে চাইলে হোটেলের ব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ বলেন, এখানে প্রায় সব হোটেলের রান্না ফুটপাতের ওপর হয়। এতে কেউ কোনো দিন বাধা দেয়নি।

একটু সামনে সড়কটির ডান পাশের ফুটপাতের ওপর রাখা হয়েছে সারি সারি রিকশা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, ফুটপাতে টাইলস বসানোর সময় রিকশাগুলো সড়কে নামিয়ে রাখা হয়েছিল। কাজ শেষ হতেই ফুটপাত চলে গেছে রিকশার দখলে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি যমুনা লিমিটেডের মালিকানাধীন একটি ফাঁকা জায়গায় রিকশা গ্যারেজটি গড়ে তোলা হয়েছিল। পরে ওই জায়গায় স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু হলে গ্যারেজটি ফুটপাতের ওপর নিয়ে আসা হয়। আর এর নেপথ্যে আছেন যমুনার ওই জায়গার তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ লতিফ। মূলত তাঁর মালিকানায় আছে রিকশা গ্যারেজটি। প্রতিটি রিকশা থেকে দৈনিক ৩০ থেকে ৪০ টাকা হারে ভাড়া তোলা হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মোহাম্মদ লতিফ বলেন, ‘যখন ফাঁকা জায়গা ছিল, তখন গ্যারেজটি আমি দেখভাল করতাম। কিন্তু ফুটপাতে গড়ে ওঠা গ্যারেজের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’

এদিকে সড়ক ঘেঁষে গড়ে ওঠা ঝিলপাড় বস্তির দোতলা-তিনতলা ছাপরাঘরের অস্থায়ী কিছু সিঁড়ি ফুটপাতের ওপর দেখা গেছে। কেউ কেউ আবার পুরো ফুটপাত দখল করে বসতঘর গড়ে তুলেছেন। এ রকম একজন আছমা বেগম। তিনি বলেন, ‘বস্তিতে নতুন বাড়ি নির্মাণের কাজ চলছে। অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। তাই অস্থায়ীভাবে ফুটপাতে থাকছি। কাজ শেষ হলেই ফুটপাত ছাড়ব।’

এ ছাড়া ঝিলপাড় বস্তিসংলগ্ন পুরো ফুটপাত দখল করে পুরোনো লোহা-লক্কড়, কাঠ ও চায়ের টংঘর দেখা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ফুটপাত থেকে নিয়মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করছি। কিন্তু সকালে উচ্ছেদ অভিযান চালালে বিকেলেই তা দখল হয়ে যায়। ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে স্থানীয় নাগরিক, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, রাজনীতিবিদ ও পুলিশ প্রশাসনকে যৌথভাবে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।’