সাইকেলে আহসানের স্বদেশ ভ্রমণ

বাবার দেওয়া এই সাইকেলে করেই ৬৪ জেলা ভ্রমণ করেন আহসান হাবীব। ছবি: আবদুস সালাম
বাবার দেওয়া এই সাইকেলে করেই ৬৪ জেলা ভ্রমণ করেন আহসান হাবীব। ছবি: আবদুস সালাম

টাকাপয়সার টানাটানিতে পড়াশোনার ইতি টানেন পঞ্চম শ্রেণির পরই। পরিচিতজনেরা বিভিন্ন জায়গা ঘুরে এসে গল্প করতেন। সেসব শুনতে শুনতেই মনে হলো, দেশটা একটু ঘুরে দেখা যাক। ঠাকুরগাঁওয়ের আহসান হাবীব (২৯) দুই চাকার বাহনে চেপে ঘুরে দেখলেন ৬৪ জেলা।

যাত্রা শুরু করেছিলেন এ বছরের ২ এপ্রিল ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার নিজ বাড়ি থেকে। দেশের ৬৪ জেলায় ঘুরে ঢাকার প্রেসক্লাবে এসে যাত্রা শেষ করেন গতকাল ১২ জুলাই। রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ বিভাগ হয়ে ঢাকা বিভাগের জেলা ঘোরেন তিনি।

আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব জেলাতেই অন্তত এক রাত করে থেকেছি। কিছু কিছু জায়গায় বেশি দিনও থেকেছি। সস্তা আবাসিক হোটেলে থেকেছি। আবার কোনো কোনো জায়গায় জেলা প্রশাসক বা মেয়র থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।’ প্রমাণ হিসেবে আহসান জেলাগুলোর প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতা বা স্কুলশিক্ষকদের দিয়ে দু-কলম লিখিয়েও এনেছেন।

আহসানের বাহন ছিল বাবার বাইসাইকেল। খরচটাও বাবাই দিয়েছেন। ভ্রমণে সবজি, ভাত ও রুটি খেয়েছেন। কারণ হিসেবে বললেন, এতে খরচ কম হয়। পাশাপাশি ভারী খাবার না খাওয়ায় সাইকেল চালাতেও সুবিধা হয়।

সাইকেলে ভ্রমণের শখ মাথায় চাপল কেন? উত্তরে আহসান বলেন, ‘আমি রেকর্ডের জন্য কিছু করিনি। এর আগে হয়তো আরও কেউ এভাবে ঘুরেছেন। দেশকে চিনব, জানব এবং দেশকে ভালো কিছু দেব, দেশের পণ্য মানুষ ব্যবহার করবে—এই চিন্তা থেকেই ঘুরেছি।’ এ ছাড়া জানালেন, নিজের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সনদ নেই। পড়ালেখা না করার ফলে দেশের অনেক কিছুই তাঁর জানার বাইরে। তাই নিজেই দেশ দেখতে বের হন। পরিচিত অনেকে দেশ-বিদেশ ঘুরে গল্প করেন। তাঁর হয়তো বিদেশে যাওয়া হবে না। কিন্তু দেশ তো ঘুরতে পারবেন। সেসব থেকেও আগ্রহ জন্মে দেশের সৌন্দর্য দেখার।

স্বদেশ ঘুরে উচ্ছ্বসিত আহসান। ছবি: আবদুস সালাম
স্বদেশ ঘুরে উচ্ছ্বসিত আহসান। ছবি: আবদুস সালাম

মানুষের সমর্থন ও সাধুবাদ দুই-ই পেয়েছেন বলে জানালেন আহসান। তিনি বলেন, ‘দেশটা অনেক সুন্দর। মানুষের ব্যবহারও অনেক ভালো। সব জেলার মানুষের বক্তব্য আমার ডায়েরিতে লিখেছি। ইচ্ছে আছে কোনো দিন এগুলো দিয়ে বই ছাপাব।’

আহসান পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। কখনো সবজি, কখনো মৌসুমি ফল বিক্রি করেন। আবার রংমিস্ত্রির কাজও করেন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। বিয়ে করেছেন। ছোট একটি মেয়েও আছে। জানালেন, তাঁর এই ভ্রমণে পরিবার সমর্থন দেয়। আয়োজন করে বাড়ি থেকে বিদায়ও দেওয়া হয়। আহসানের পরবর্তী লক্ষ্য দেশের সব উপজেলা ঘুরে দেখা।