জাওয়াদদের হাত ধরেই মেধাভিত্তিক জাতি হবে বাংলাদেশ

আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে প্রথম স্বর্ণপদক জয়ী বাংলাদেশ গণিত দলের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পদকপ্রাপ্তদের সঙ্গে অতিথিরা। টিসিবি ভবন, ঢাকা, ১৭ জুলাই। ছবি: সাইফুল ইসলাম
আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে প্রথম স্বর্ণপদক জয়ী বাংলাদেশ গণিত দলের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পদকপ্রাপ্তদের সঙ্গে অতিথিরা। টিসিবি ভবন, ঢাকা, ১৭ জুলাই। ছবি: সাইফুল ইসলাম

আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে প্রথম সোনাজয়ী আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরীর মতো মেধাবীদের হাত ধরেই ২০২১ সালে বাংলাদেশ মেধাভিত্তিক জাতি হবে বলে মন্তব্য করেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ।

আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে (আইএমও) প্রথম স্বর্ণপদক জয়ী বাংলাদেশ গণিত দলকে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের টিসিবি মিলনায়তনে আজ মঙ্গলবার বিকেলে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি এই সংবর্ধনার আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানের সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ও বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে গণিত অলিম্পয়াড নিয়ে উৎসবের মডেলে আয়োজন হয়—এমনটা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে হয় না। তবে গণিত অলিম্পিয়াডে মেয়েদের অংশগ্রহণ একটু কম। উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে এই অংশগ্রহণটা বাড়ানোর।’

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বাংলাদেশের গণিত দলকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ‘ওদের সংবর্ধনা দিয়ে আমরা নিজেরাই সম্মানিত। মেধার দিক দিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্ম দরিদ্র নয়। এ দেশের নতুন প্রজন্ম অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে কম নয়। এই মেধাবীরাই দেশকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করবে।’

শুভেচ্ছা বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ বলেন, ‘বাংলাদেশকে ২০২১ সালে মেধাভিত্তিক জাতিতে রূপান্তর করবে জাওয়াদের মতো মেধাবীরাই।’ আন্তর্জাতিক আসরে এত বড় অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ গণিত দলের প্রত্যেক সদস্যকে একটি করে ল্যাপটপ উপহার দেন।

২০০৩ সালে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির দায়িত্ব নেন। সেই থেকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় প্রতিবছর সারা দেশে গণিত উৎসব করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক আসরে বাংলাদেশ যোগ দিচ্ছে ২০০৫ সাল থেকে।

২০০৯ সালে প্রথম বাংলাদেশের ব্রোঞ্জ পদক আসে। আর ২০১২ সালে প্রথম সিলভার পদক আসে। গণিত অলিম্পিয়াডে আগামীর লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ গণিত দলের কোচ মাহবুব মজুমদার বলেন, ‘সোনার পদকটা জেতাই মূল লক্ষ্য নয়, আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত বাংলাদেশ গড়ার জন্য কাজ করা।’

গণিত অলিম্পিয়াডের থিম সং প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। দেখানো হয় ২০০১ সাল থেকে বাংলাদেশে গণিত অলিম্পিয়াডের পথচলা নিয়ে নির্মিত ‘নিউরনে অনুরণন থেকে স্বর্ণপদক’ শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্র। এরপর বিশিষ্ট অতিথিদের বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে চলতে থাকে গান, নাচ পরিবেশনা, বিজয়ী দলকে ফুলেল অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।

১২ জুলাই রোমানিয়ায় আইএমওতে প্রথম স্বর্ণপদক পায় বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী। আইএমও-তে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এটিই একমাত্র সোনার পদক। এই দলের তিন সদস্য তাহনিক নূর সামিন, জয়দীপ সাহা ও তামজিদ মুর্শেদ রুবাব পেয়েছে ব্রোঞ্জ পদক। অপর দুই সদস্য রাহুল সাহা ও সৌমিত্র দাস সম্মানজনক স্বীকৃতি অর্জন করেছে।

বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। বিজয়ী দলকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের চেয়ারম্যান সায়েম আহমেদ। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জাওয়াদকে পাঁচ লাখ টাকা শিক্ষাবৃত্তি ও বাকি সদস্যদের দুই লাখ টাকা শিক্ষাবৃত্তির ঘোষণা দেওয়া হয়।

গণিতে বিজয়ী দলকে আরও শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন বুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম, কিশোর আলোর সম্পাদক আনিসুল হক।

ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানায় বিজ্ঞানচিন্তা, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি, প্রথম আলোর বন্ধুসভা, বাংলা উইকিপিডিয়া, বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম, বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি, পাওয়ার স্টেশন, বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক, মুক্ত আসর, বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন, হিমু পরিবহণ, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ, রংপুর গণিত ক্লাব, চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব, মাকসুদুল আলম ল্যাবসহ বিভিন্ন সংগঠন।