আ.লীগের 'ঠেলাগাড়ি' কৌশল

বরিশাল সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা
বরিশাল সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘ঠেলাগাড়ি’। আর সংরক্ষিত নারী আসনে ‘বই’। 

বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২২ টিতেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা নিয়েছেন ঠেলাগাড়ি প্রতীক। আর নারীদের জন্য সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডের ৮টিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা পেয়েছেন বই প্রতীক। নির্দলীয় এই নির্বাচনে প্রতীক নেওয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিতদের এই কৌশল নিয়ে শহরে চলছে নানামুখী আলোচনা।

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীরা বলছেন, ভোটে বিশেষ সুবিধা পেতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা সবাই একই প্রতীক চেয়েছেন। অনেকে আশঙ্কা করছেন, এটি ভোটে কারচুপির কৌশল।

সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও সাধারণ ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ভোট হয় নির্দলীয়। তবে রাজনৈতিক দলগুলো ওয়ার্ডেও প্রার্থীদের সমর্থন দিয়ে থাকে। বরিশালে ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে ২৮ টিতে আওয়ামী লীগ সমর্থন জানিয়েছেন। দুটি ওয়ার্ডে দলের একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী থাকায় তা উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। ১৫, ১৬ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত তিন কাউন্সিলর প্রার্থী জয়ের পথে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত ২২টি ওয়ার্ডেই কাউন্সিলর প্রার্থীরা পেয়েছেন ঠেলাগাড়ি প্রতীক।

আর সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৮টিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা পেয়েছেন বই। বাকি দুটির একটিতে মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। সেখানে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী জয়ের পথে। অন্যদিকে বিএনপি দলীয়ভাবে কোনো কাউন্সিলর প্রার্থীকে সমর্থন জানায়নি। বর্তমান কাউন্সিলর ও দলীয় নেতারা যে যাঁর মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়দুল হক প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মেয়র ও সাধারণ এবং সংরক্ষিত (নারী) ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটকেন্দ্রে একজন ভোটারকে তিনটি ব্যালট সরবরাহ করা হয়। কাউন্সিলররা বিভিন্ন ওয়ার্ডে আলাদা প্রতীক পাওয়ায় একেক ওয়ার্ডে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতি দেখা দেয়। এতে ভোট কারচুপি ও অনিয়মের সুযোগ কম থাকে। কিন্তু সব ওয়ার্ডে তিনটি পদে একটি দল যখন একই প্রতীক ব্যবহার করে, তখন ভোট কাটা সহজ হয়ে যায়। তাঁর দাবি, ভোটে কারচুপি করতেই আওয়ামী লীগ প্রতীক সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে।

একই সঙ্গে সরকার ও বিরোধী দলে থাকা জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের দলীয় কাউন্সিলরদের একই প্রতীক নেওয়াটা পরিকল্পিত। একই প্রতীক হওয়ায় ভোটে কারচুপি করাটা সহজ হবে।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, কাউন্সিলর পদে সাধারণত কোনো প্রার্থীর পছন্দের প্রতীক আর কেউ না চাইলে তাঁকে দেওয়া হয়। একটি প্রতীক একাধিক প্রার্থী চাইলে লটারি হয়। একাধিক প্রার্থী ঠেলাগাড়ি ও বই প্রতীক চাননি।

বরিশাল জেলা বাসদের আহ্বায়ক ইমরান হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, কাউন্সিলর নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ছিল না। কিন্তু আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলররা সবাই ঠেলাগাড়ি ও বই প্রতীক পাওয়ায় এখন এটি দলীয় প্রতীক হয়ে গেছে। এটি শুভ ইঙ্গিত নয়।

অবশ্য নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী মনে করেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এসব তার অংশ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রতীক বরাদ্দ দেয় নির্বাচন কমিশন। একাধিক প্রার্থী থাকলে লটারির মাধ্যমে প্রতীক বরাদ্দ হয়ে থাকে।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা একই প্রতীক নেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বরিশাল নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা একই প্রতীক নেওয়ার বিষয়টি তাঁরা পর্যবেক্ষণ করছেন। সবাই একযোগে একই প্রতীক নেওয়া সমীচীন হয়নি। এটা সুষ্ঠু ভোটের ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে সন্দেহ তৈরি করেছে।