যৌন হয়রানির অভিযোগে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত

সহকর্মী তিন নারী শিক্ষককে যৌন হয়রানির অভিযোগে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও পরিবেশনাবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ রুহুল আমিনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রুহুল আমিনকে বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে একই বিভাগের তিনজন নারী শিক্ষক উপাচার্য বরাবর রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন।

বরখাস্ত হওয়ায় সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ রুহুল আমিন অবশ্য যৌন হয়রানি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কাউকে কোনো ধরনের যৌন হয়রানি করিনি। আমাদের বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের চূড়ান্ত পরীক্ষার মৌখিক পর্বে নয়জন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার এ নিয়ে আমাদের একটি সভা হয়। ওই সময় আমার সঙ্গে অভিযোগকারী তিনজনসহ একাধিক শিক্ষকের মতবিরোধ হয়। এর জের ধরে তাঁরা আমার নামে বানোয়াট অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ না দিয়ে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়।’

একটি অভিযোগপত্রে হয়রানির শিকার হওয়ার কথা জানিয়ে স্বাক্ষর করেন ওই তিন নারী শিক্ষক।
অভিযোগে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই মুহাম্মদ রুহুল আমিন বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে তাঁদের হয়রানি করেছেন। গতকাল বিভাগীয় শিক্ষকদের একটি সভা শেষে রুহুল আমিন একজন নারী শিক্ষকের দিকে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন এবং চোখ টিপ দিয়ে খারাপ ইঙ্গিত করেন। ওই অবস্থায় তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন ওই নারী শিক্ষক। পরে রুহুল আমিনের কাছে ওই দিন এবং আগের বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের ইঙ্গিতপূর্ণ আচরণের ব্যাপারে অভিযোগ করা হলে তিনি (রুহুল আমিন) সবার সামনে তা অকপটে স্বীকার করেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, রুহুল আমিন বিভিন্ন সময়ে অভিযোগকারী শিক্ষকদের ছবি কুরুচিপূর্ণভাবে বিকৃত করে ফেসবুকের ইনবক্সে পাঠাতেন। নোংরা ইঙ্গিতপূর্ণ কথা লিখে ফেসবুকে বার্তা পাঠাতেন। নারী শিক্ষকেরা শাড়ি পরে এলে ইঙ্গিতপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন এবং নোংরা মন্তব্য করতেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, এর আগে সাবেক উপাচার্য মোহীত উল আলমের কাছে রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে মৌখিক অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন সময়ে রুহুল আমিনের এসব অপকর্ম সহ্য করা হলেও গতকাল তিনজন মিলে বিষয়টি লিখিতভাবে উপাচার্যের কাছে জানানোর সিদ্ধান্ত নেন।

অভিযোগকারী এক শিক্ষক বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে রুহুল আমিন আমাদের তিনজনের সঙ্গে একই ধরনের অশালীন আচরণ করে আসছিলেন। প্রতিকার না পেয়ে গতকাল আমরা উপাচার্য এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে অভিযোগ করতে বাধ্য হই।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হুমায়ুন কবীর বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর প্রাথমিকভাবে ঘটনা সত্য মনে হওয়ায় রুহুল আমিনকে সাময়িকভাবে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ঘটনাটির আরও তদন্ত করা হবে।