'কষ্ট হলেও অন্তত দুই-আড়াই বছর জেলে থাকুক'

‘কোনো মা-বাবা কি চান তাঁর সন্তান জেলে থাকুক? কিন্তু এভাবে আর কত দিন? নেশাগ্রস্ত হয়ে দিন দিন ছেলের অত্যাচার বেড়ে যাচ্ছিল। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মঙ্গলবার তার স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে গেছে। উপায় না পেয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘরে ঢোকার পর কৌশলে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে রাখি। এরপর আজ বুধবার সকালে সংবাদ দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি।’ এভাবেই নিজের কষ্টের কথা বলছিলেন এক মা।
মাদকাসক্ত ছেলে মো. রাতুল শেখকে (২৮) পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে মা এলিনা মান্নান এসব কথা বলেন। তিনি রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সাবেক নারী সদস্য। তিনি বলেন, গত এক মাসে রাতুল অন্তত ৩০ হাজার টাকার মতো নেশার পেছনে খরচ করেছে। এত টাকা কোত্থেকে দেব? এখন ভাবছি, কষ্ট হলেও অন্তত দুই-আড়াই বছর জেলে থাকুক। এর আগেও একবার তাকে এভাবে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছিল। কিছুদিন থাকার পর বের হয়ে কয়েক দিন ভালো থাকলেও ফের নেশার জগতে চলে যায়।
থানা-পুলিশ ও রাতুলের পরিবার জানায়, দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য এলিনা মান্নান ও একটি বেসরকারি ওষুধ কোম্পানির গাড়িচালক মান্নান শেখ দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে রাতুল শেখ সবার বড়। কিশোর বয়সেই নেশায় আশক্ত হয়ে পড়েন। দিন দিন তাঁর ইয়াবা সেবন বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি পরিবারের ওপর অত্যাচার বেড়ে যায়। তাঁকে প্রতিদিন নেশার জন্য টাকা দিতে হতো। না দিলেই ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর শুরু করতেন। পরিবারের ধারণা, বিয়ে দিলে ছেলে নেশার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসবেন। পরিবারের সবাই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রায় চার বছর আগে তাঁকে বিয়ে করান। বর্তমানে তাঁর আড়াই বছরের একটি ছেলে রয়েছে।
পরিবার জানায়, বিয়ের পরও তাঁর মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসেনি। উল্টো নেশার জন্য স্ত্রী ও একমাত্র ছেলেকে জিম্মি করে মা-বাবার কাছ থেকে টাকা আদায় করা শুরু করেন। কয়েক মাস আগে প্রায় চার লাখ টাকা ঋণ করে পরিবার থেকে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা কিনে দেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিদিনের নেশার টাকা জোগাড় হলেই অটোরিকশা চালানো বাদ দিয়ে নেশায় মত্ত হয়ে ওঠেন রাতুল। গত চার-পাঁচ দিন আগে অটোরিকশাটি তাঁর থেকে নিয়ে অন্যত্র ভাড়া দেয় পরিবার। ফলে নেশার টাকা জোগাড় করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন রাতুল। প্রতিদিন ঘরে ফিরে স্ত্রীকে মারধর করেন। এমনকি আড়াই বছরের শিশুসন্তানকে জিম্মি করে মায়ের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন। না দিলেই ভাঙচুর শুরু করেন।
শেষ পর্যন্ত পরিবারের সবাই সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির্জা আবুল কালাম আজাদ জানান, রাতুলকে পরিবারের সহযোগিতায় আজ বুধবার সকালে আটক করা হয়। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ২১টি ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়। পরে তাঁর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে মামলা করে দুপুরে দিকে রাজবাড়ীর মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।