নান্দনিক এক জাদুঘর

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের স্মৃতি জাদুঘর।  ছবি: প্রথম আলো
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের স্মৃতি জাদুঘর। ছবি: প্রথম আলো

জাদুঘরটির নাম কাঙ্গাল হরিনাথ স্মৃতি জাদুঘর। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কুন্ডুপাড়া এলাকায় এটি অবস্থিত। কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত জাদুঘরটি দেখতে নান্দনিক। এর বাইরে যেমন ভেতরটাও আরও সুন্দর। পরিপাটি করে সাজানো বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন। সবকিছুই ঊনবিংশ শতকের নির্ভীক সাংবাদিক সংবাদপত্র গ্রামবার্তা প্রকাশিকার সম্পাদক কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারকে ঘিরে। তাঁর স্মৃতিকেই নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে নির্মাণ করা হয়েছে এই জাদুঘর। গতকাল ২০ জুলাই ছিল কাঙ্গাল হরিনাথের জন্মজয়ন্তী।

গত বছরের ডিসেম্বরে জাদুঘরটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। টিকিট কেটে ঢুকতে হয় জাদুঘরে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন জাদুঘরটি জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ দেখভাল করছে। এহসানুল হক নামে এক কর্মকর্তা জাদুঘরের ব্যবস্থাপক।

জাদুঘরে নেই ছাপাযন্ত্রটি

এখানে আসা দর্শনার্থীদের অপূর্ণ থাকতে হয়। কেননা জাদুঘরের ভেতর নেই হরিনাথের শেষ স্মৃতিচিহ্ন সেই অমূল্য ঐতিহাসিক সম্পদ, যা দিয়ে হরিনাথ রাত জেগে পত্রিকা ছাপতেন। সেই ছাপাযন্ত্রটি রাখা হয়নি জাদুঘরে। এটি প্রায় ৫০০ গজ দূরে তাঁর বসতবাড়ি কাঙ্গাল কুটিরে রয়েছে।

সম্প্রতি হরিনাথের সেই কুটিরে গিয়ে দেখা যায়, ইটগুলো খসে পড়ছে, দেয়াল ভাঙা। দরজা-জানালা ভেঙে পড়েছে। ধসে গেছে মেঝেও। আগাছা জন্মে টিনের চালা ঘরটি রূপ নিয়েছে ঝোপঝাড়ে। আছে মাকড়সার বসতিও। এই হচ্ছে গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের বাড়ি। কুটিরের ভেতরে এক কোণে রয়েছে সেই ঐতিহাসিক ছাপাযন্ত্রটি। কাঙ্গাল নেই, তাঁর ছাপাযন্ত্রটিও আজ মৃতপ্রায়।

হরিনাথের পঞ্চম পুরুষ অশোক মজুমদারের স্ত্রী গীতা মজুমদার বললেন, ১৯৮৪ সালে সর্বশেষ এই যন্ত্রে কিছু ছাপা হয়েছিল। এরপর আর কোনো ছাপা হয়নি। এই যন্ত্রে লালন, মীর মশাররফ ও জলধর সেনের হাতের স্পর্শ রয়েছে।

মুদ্রণযন্ত্রটি কেন জাদুঘরে দেননি—জানতে চাইলে গীতা মজুমদার বলেন, ‘এ ব্যাপারে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে আমি লিখিতভাবে জানিয়েছি। আমার কিছু বিষয় আছে, সেগুলো তাদের জানানো হয়েছে।’ কী বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানাতে চাননি।

কাঙ্গাল হরিনাথের ব্যবহৃত ছাপাযন্ত্র।
কাঙ্গাল হরিনাথের ব্যবহৃত ছাপাযন্ত্র।


স্মৃতি জাদুঘর

কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের স্মৃতি ধরে রাখতে বছর কয়েক আগে জাদুঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। লাল ইটের নান্দনিক জাদুঘরটির ভেতরে রয়েছে বেশ কিছু ছবি ও লেখা। হরিনাথ কুটিরের আদলে ভেতরের সজ্জা করা হয়েছে। দোতলায় প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে হরিনাথের বিশাল এক ছবি। এরপরই তাঁর পরিচিতি। হরিনাথসহ তাঁর স্ত্রী এবং লালন, মীর মশাররফের ছবিও আছে। হরিনাথের স্বহস্তে লেখা কবিতাও শোভা পাচ্ছে দেয়ালে লাগানো অ্যালবামে। যেসব অক্ষর ছাপাযন্ত্রে ব্যবহার করা হতো, সেই সব অক্ষরও রাখা হয়েছে জাদুঘরে। জাদুঘরের একপাশে রয়েছে গ্রন্থাগার। সেখানে আছে প্রায় ছয় শতাধিক বই।

বাংলাপিডিয়া বলছে, ১৮৬৩ সালে কুমারখালীতে স্থাপিত হয় মথুরনাথ যন্ত্র। বিখ্যাত ঐতিহাসিক অক্ষয় কুমার মৈত্রর বাবা হরিনাথের বন্ধু মথুরনাথ মৈত্র এটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে তিনি মুদ্রণযন্ত্রটি হরিনাথকে দান করেন। ১৮৭৩ সাল থেকে এ যন্ত্রেই গ্রামবার্তা প্রকাশিকা প্রকাশিত হয়। ২৫ বছর ধরে নিয়মিত প্রকাশিত হয় এটি।