ঘোষণা দিয়ে দায় স্বীকার জেএমবির!

শাহজাহান বাচ্চু
শাহজাহান বাচ্চু

প্রকাশক ও লেখক শাহজাহান বাচ্চুকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখিত বক্তব্য ও ভিডিও পোস্ট করে এই হত্যার দায় স্বীকার নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন জেএমবি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরাও পোস্ট এবং ভিডিও দেখেছেন। তবে আইডি থেকে এসব বার্তা পোস্ট করা হয়েছে, তা জেএমবির কিনা তা তাঁরা নিশ্চিত নন। যদিও পোস্টে যা লেখা রয়েছে তা দেখে মনে হয়েছে এটা জেএমবির হতে পারে। কর্মকর্তারা বলছেন, পোস্টগুলো সত্যিই জেএমবির হলে কোনো হত্যাকাণ্ডের পরে এটাই হবে এ প্রক্রিয়ায় সংগঠনটির প্রথম দায় স্বীকারের ঘটনা। এর মাধ্যমে সংগঠনটি তাদের নতুন ধরনের সক্ষমতার জানান দিয়েছে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।

গত ১১ জুন মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের গ্রামে বিশাখা প্রকাশনীর মালিক ও লেখক শাহজাহান বাচ্চুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। শুরু থেকেই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা সন্দেহ করছিল পুলিশ ও গোয়েন্দারা। ওই হত্যাকাণ্ডের সূত্র ধরে গত ২৩ জুন রাতে গাজীপুরের একটি বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ সদর দপ্তরের এলআইসি বিভাগ, ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও বগুড়া জেলার পুলিশ। সেই বাড়িতে আব্দুর রহমান নামে একজন ভাড়া থাকছিলেন বলে জানা গেছে। ওই অভিযানের পরে আব্দুর রহমানের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

ওই ঘটনার পর গত ২ জুলাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেলিগ্রামে নিজেদের চ্যানেলে একটি পোস্ট দিয়ে ওই হত্যার দায় স্বীকার করে জেএমবি। ওই পোস্টে আব্দুর রহমান নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। পরে এ বিষয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করে সংগঠনটি। সেখানে বলা হয় চারজন মিলে শাহজাহান বাচ্চুকে হত্যা করেছে। হত্যার কারণ হিসেবে শাহজাহান বাচ্চুর ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে রোববার কথা হয় ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগের দু’জন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে। তদন্তাধীন বিষয় হওয়ায় তাঁরা নাম প্রকাশ করতে চাননি। তাঁরা বলছেন, শাহজাহান বাচ্চু হত্যার পরপর তাঁরা প্রথমে আনসার আল ইসলামকে (সাবেক আনসারুল্লাহ বাংলা টিম—এবিটি) সন্দেহ করছিলেন। কারণ এখন পর্যন্ত ফেসবুক বা ব্লগে ভিন্ন মত পোষণের জন্য যতগুলো হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, তার সবগুলোর পেছনেই এবিটির যুক্ততা পাওয়া গেছে। শাহজাহান বাচ্চুর লেখালেখির ধরন বা প্রোফাইল দেখে তাঁরা প্রথমে ধারণা করেছিলেন আনসারুল্লাহ এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে আনসারুল্লাহর জঙ্গিরা সাধারণত হত্যার ক্ষেত্রে ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে। হামলায় আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার ও ব্যবহৃত হাতে তৈরি গ্রেনেডের (আইইডি) ধরন দেখে পরে তাঁরা নিশ্চিত হন এটা জেএমবির (পুরোনো) কাজ। বেশ কিছু সূত্র ধরে তদন্তে তারা গাজীপুরে জেএমবির একটি আস্তানার সন্ধান পান।

কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, শাহজাহান বাচ্চু হত্যার সঙ্গে যুক্ত সবাইকেই তাঁরা শনাক্ত করতে পেরেছেন। তবে যে বিষয়টি তাদের ভাবাচ্ছে তা হলো জেএমবির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জেএমবির ঘোষণা দেওয়ার বিষয়টি। কর্মকর্তাদের মতে এটি জেএমবির নতুন সক্ষমতা। এ জঙ্গি সংগঠনটি এখন পর্যন্ত কোনো হত্যা বা নাশকতার পরেই এ ধরনের ঘোষণা দিয়ে দায় স্বীকার করেনি।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, জেএমবির পুরোনো ধারাটির সদস্যদের সাধারণ প্রবণতা হলো তাঁরা মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত, গ্রামীণ নিম্নবিত্ত বা কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা। এর আগ পর্যন্ত অনলাইনে তাঁদের খুব বেশি আনাগোনা দেখা যায়নি। কিন্তু এখন তাঁরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেরকম ভাবে সক্রিয় তাতে ধারণা করা যায় তাঁদের মধ্যে নতুন ঘরানার সদস্যরা যুক্ত হয়েছেন। আবার আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীর অনুসারী দু’টি ধারার মধ্যে যে কোনো একটি ধারা জেএমবির সঙ্গে যুক্ত হতে পারে বলেও তাঁরা ধারণা করছেন।

ওই কর্মকর্তা বলেন, পুরোনো জেএমবির বেশির ভাগ সদস্য আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী আল কায়েদার নীতি আদর্শকে সমর্থন করেন। আর বাংলাদেশে আল কায়েদার অনুসারী হলো আনসার আল ইসলাম বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। আন্তর্জাতিক আরেক জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের সমর্থক জঙ্গি গোষ্ঠীটিকে এ দেশের পুলিশ ‘নব্য জেএমবি’ নাম দিয়েছে। একই ধারার জঙ্গিদের নাম র‍্যাব দিয়েছে ‘জেএমবির তামিম-সারোয়ার গ্রুপ’। কর্মকর্তারা ধারণা করছেন পুরোনো জেএমবির সঙ্গে আনসারুল্লাহ জঙ্গিরা একত্রিত হতে পারেন। বহুদিন ধরেই এ রকম একটা প্রচেষ্টার কথা শোনা যাচ্ছিল। এ দুটি সংগঠন যদি মিলে যায় তাহলে তা হবে বাংলাদেশের জন্য নতুন বিপদের কারণ।