নাটোরের বিদ্যালয়ে সাপের উৎপাত, লাঠি হাতে পাহারায় শিক্ষার্থীরা

শ্রেণিকক্ষ থাকলেও বারান্দায় পাঠদান চলছে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কম। এর পেছনের কারণ রীতিমতো ভীতিকর। শ্রেণিকক্ষের ভেতরে, বাইরে, বারান্দায়, টেবিল-বেঞ্চের নিচে, এমনকি শিক্ষকদের কক্ষ থেকেও আচমকাই বের হচ্ছে ছোট-বড় সাপ। কোনোটা বিষধর, কোনোটা নির্বিষ। সাপের উৎপাতে আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে থাকতে পারছে না। পালা করে পাহারা দিয়ে তারা সাপ মেরে চলেছে। গত কয়েক দিনে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে কমপক্ষে ১৫টি সাপ মেরেছে বলে দাবি করেছে শিক্ষার্থীরা।

ঘটনাটি ঘটেছে নাটোরের সিংড়ার উপজেলার শেরকোল ইউনিয়নের সোনাপুর পমগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

গতকাল সোমবার দুপুরে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে বিদ্যালয়ের বারান্দায়। শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও কম। কারণ জানতে চাইলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র হাসিবুল ইসলাম জানায়, কদিন ধরে তাদের বিদ্যালয়ে সাপের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। যখন-তখন হুট করে সাপ বের হচ্ছে। বিশেষ করে শ্রেণিকক্ষের ভেতর থেকে সাপ বেশি বের হচ্ছে। তাই তাদের অনেকেই বিদ্যালয়ে আসছে না। যারা আসছে, তারা সব সময় ভয়ে রয়েছে। সতর্কও থাকতে হচ্ছে। পাশাপাশি কয়েকজন শিক্ষার্থী পালা করে লাঠি হাতে পাহারা দিচ্ছে।

মারুফ নামের এক ছাত্র জানায়, গত রোববার সকালে ক্লাস শুরুর ঠিক আগে প্রথম শ্রেণির কক্ষের সামনে দুটি সাপ বের হয়। তারা দুটি সাপকে পিটিয়ে মেরেছে।

আসিফ নামের আরেক ছাত্র জানায়, চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ওয়াদুদের দিকে রোববার একটি সাপ তেড়ে এসেছিল। পরে পাহারারত এক শিক্ষার্থী লাঠি দিয়ে সাপটিকে মেরে ফেলেছে। সে জানায়, সাপ কোন দিক দিয়ে কীভাবে বিদ্যালয়ে ঢুকছে, তা তারা বুঝে উঠতে পারছে না। এ পর্যন্ত তারা ১৫টি সাপ পিটিয়ে মেরেছে।

পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী বিলকিস আক্তার জানায়, সাপের উৎপাতের কারণে অভিভাবকেরা বিদ্যালয়ে আসতে দিচ্ছেন না।

সুমাইয়া ও মিথিলা নামের দুই ছাত্রী জানায়, প্রতিদিনই স্কুলে সাপ দেখছে তারা। সাপের ভয়ে অনেকে বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। তাদেরও বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে আসতে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে।

বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী সোনালী সাহার বাবা দ্বিজেন্দ্রনাথ সাহা বলেন, ‘বিদ্যালয়ে সাপ বের হচ্ছে শুনে মেয়েকে শ্রেণিকক্ষে ঢুকিয়ে স্কুল চলাকালে আমি বাইরে অপেক্ষা করছি দুদিন ধরে। এখানে এখন কোনো শিশুই নিরাপদ নয়।’

বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক শাহাদত হোসেন ও শিরিনা সুলতানা জানান, সাপের উপদ্রবে তাঁরা চিন্তিত। ছোট-বড় দুধরনের সাপই দেখেছেন তাঁরা। ছোট সাপগুলো লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। সাপের কারণে শিশুদেরও মনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। গত দুদিনে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রমজান আলী বলেন, হঠাৎ সাপের উপদ্রবে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই আতঙ্কিত। শিশুরাই নিজেদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে চলেছে। অভিভাবকেরা সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে চাইছেন না। এভাবে চলতে থাকলে বিদ্যালয় বন্ধ করে দিতে হতে পারে।

প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম জানান, সাপের উৎপাতের বিষয়টি মৌখিকভাবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তিনি জরুরি কাজে ব্যস্ত থাকায় এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমজাদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি জানেন না বলে জানান। তবে সাপের উপদ্রব রোধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, শিশুদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনে বিদ্যালয়টি বন্ধ রাখা হবে।