বরিশালে 'ভোট ছিনতাই ঠেকানো' নিয়ে ভাবছে বিএনপি

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে শহর। ছবি: প্রথম আলো
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে শহর। ছবি: প্রথম আলো

গোটা এলাকা পোস্টারে ছেয়ে গেছে। দিন-রাত চলছে মাইকে প্রচার। কখনো প্রার্থী সশরীরে ভোট চাইছেন। কখনো প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইছেন নেতা-কর্মীরা। আবার ধারণ করা কণ্ঠ মাইকে বাজিয়েও ভোট চাওয়া হচ্ছে। ৩০ জুলাই সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে বরিশাল মহানগরের জায়গায় জায়গায় চলছে জমজমাট নির্বাচনী প্রচার।


তবে এই আয়োজনে অনেকটাই যেন পিছিয়ে বিএনপি। পিছিয়ে পড়ার কারণ জানাতে গিয়ে বিএনপি নেতারা বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কারণে তাঁদের ‘মাইক চলতে পারে না’। গ্রেপ্তার ও হামলার আতঙ্কের কারণে তাঁরা সরব হতে পারছেন না। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট চাইতে পারছেন না। এ ছাড়া নিয়মের বাইরে যেখানে-সেখানে নির্বাচনী ক্যাম্প করেননি তাঁরা। তবে প্রচার নয়, ভোটের দিন ‘আওয়ামী লীগের ভোট ছিনতাই’ নিয়ে বিএনপি বেশি চিন্তিত বলে জানিয়েছেন নেতারা।

গতকাল সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে বরিশালে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বাসদের মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে তাঁদের কর্মীরা প্রচার চালাচ্ছেন। বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে প্রচার কার্যক্রম সেভাবে দেখা যায়নি। মহানগরের বিভিন্ন সড়ক পোস্টারে ছেয়ে গেছে। এসব পোস্টারের বেশির ভাগ আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর। এরপর জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন ও বিএনপির মুজিবুর রহমান সারোয়ারের পোস্টার। এ ছাড়া বাসদের মেয়র প্রার্থী মনীষা চক্রবর্তীর পক্ষে তাঁর কর্মী-সমর্থকেরাও ভালো পোস্টার লাগিয়েছেন।

মহানগরের বিভিন্ন সড়কে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে মাইকে প্রচার চালানো হচ্ছে। এই মাইক থেকে ধারণ (রেকর্ডেড) করা কণ্ঠে মহানগরবাসীর কাছে ভোট চাওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দোকানে দোকানে, পথচারীদের কাছে নিজ দলের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইছেন। পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারের জন্য আওয়ামী লীগের ওয়ার্ডভিত্তিক অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতেও নেতা-কর্মীদের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে।

তবে প্রচারে বিএনপির তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। মহানগরের অন্তত ১২টি ওয়ার্ডে বিএনপির অস্থায়ী নির্বাচনী কার্যালয় চোখে পড়েনি। এ ছাড়া মাইকের মাধ্যমে মহানগরবাসীর কাছে ভোট চাওয়ার বিষয়েও পিছিয়ে বিএনপি। গতকাল বেলা দুইটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত মহানগরের বিভিন্ন এলাকা ঘোরার সময় বিএনপির পক্ষে ভোট চাওয়া হচ্ছে, এমন কোনো মাইকের দেখা পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে বরিশাল মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদারের কাছে জানতে চাওয়া হলে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী বিএনপি তিনটি অস্থায়ী নির্বাচনী ক্যাম্প বসানোর অনুমতি পেয়েছে। এ জন্য নিয়ম মেনে আর কোনো ক্যাম্প বসানো হয়নি।

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে প্রার্থীর পোস্টার ঝোলানোর কাজ করছেন কর্মীরা। ছবি: প্রথম আলো
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে প্রার্থীর পোস্টার ঝোলানোর কাজ করছেন কর্মীরা। ছবি: প্রথম আলো

অপর এক প্রশ্নের জবাবে জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেন, বিভিন্ন এলাকায় মাইক পাঠানো হলেও সেসব মাইক আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ‘কারণে’ চলতে পারে না। এলাকায় গ্রেপ্তার আতঙ্ক এবং নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার আশঙ্কা থাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের মতো দ্বারে দ্বারে ভোট চাইতে যেতে পারেন না।

বরিশালে নির্বাচনী প্রচারে পিছিয়ে থাকার বিষয়ে বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, মাইকের মাধ্যমে ভোট চাইলে জনগণ ভোট দেবে, এই ভাবনার দিন শেষ। ভোটের দিন জোর করে ভোট ছিনিয়ে নেওয়া ঠেকানো যায় কি না, সেটি এখন বড় বিষয়। বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলে প্রচারে পিছিয়ে থাকা কোনো বিষয় না।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মুজিবুর রহমান সারোয়ারের ভূমিকা নিয়েও বরিশালে ‘গুঞ্জন’ রয়েছে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ঠিক প্রস্তুত ছিলেন না মুজিবুর রহমান। দলের কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের কারণে তিনি মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ কারণে নির্বাচনী কাজে তিনি ততটা ‘গুরুত্ব’ দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ তৃণমূল নেতাদের।

প্রচারে পিছিয়ে থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন বরিশাল জেলা বিএনপির (দক্ষিণ) সভাপতি এবং দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সচিব এবায়দুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পোস্টার ও মাইকিংয়ে বিএনপি পিছিয়ে আছে। কিছু কিছু জায়গায় পোস্টার লাগানো হলেও সেসব ফেলে দেওয়া হয়েছে। তবে দলের পক্ষ থেকে পথসভা অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।