কক্সবাজারে পৃথক পাহাড়ধসে একই পরিবারের চার শিশুসহ নিহত ৫

কক্সবাজার পৌরসভার বাঁচা মিয়া ঘোনায় পাহাড়ধসের ঘটনায় মাটি সরিয়ে আহত শিশুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: প্রথম আলো
কক্সবাজার পৌরসভার বাঁচা মিয়া ঘোনায় পাহাড়ধসের ঘটনায় মাটি সরিয়ে আহত শিশুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজার পৌরসভার বাঁচা মিয়ার ঘোনা ও রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি এলাকায় পৃথক পাহাড়ধসের ঘটনায় এক পরিবারের চার ভাইবোনসহ পাঁচজন মারা গেছে। আজ বুধবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে। পাহাড়ধসে আরও প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি ও মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে তিন দিন ধরে কক্সবাজারে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে বাঁচা মিয়ার ঘোনা এলাকার সৌদিপ্রবাসী মো. জামাল হোসেনের তিন মেয়ে মর্জিয়া আক্তার (১৪), কাফিয়া আক্তার (১০) ও খায়রুন্নেছা (৬) ও ছেলে আবদুল হাই (৮)। এ ঘটনায় জামাল হোসেনের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগম আহত হয়েছেন। স্থানীয় লোকজন মাটি সরিয়ে পাঁচজনকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক চার ভাইবোনকে মৃত ঘোষণা করেন।

অন্যদিকে, রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি এলাকায় আজ ভোরে পাহাড়ধসে মোর্শেদ আলম (৬) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সে ওই এলাকার জাফর আলমের ছেলে। মোর্শেদ আলমের লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে।

বাঁচা মিয়ার ঘোনা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল্লাহ মামুন ও গিয়াস উদ্দিন প্রথম আলোকে জানান, আজ সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে শহরের বাঁচা মিয়ার ঘোনা এলাকায় ৭০ থেকে ৮০ ফুট উঁচু একটি পাহাড় ধসে সৌদিপ্রবাসী জামাল হোসেনের বাড়ির ওপর পড়ে। এ সময় ভারী বৃষ্টি হচ্ছিল। ঘরের সবাই তখন ঘুমিয়ে। পরে স্থানীয় লোকজন মাটি সরিয়ে ওই পরিবারের চার ভাইবোন ও তাদের মা ছেনুয়ারা বেগমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

স্থানীয় লোকজন জানান, টিনের বেড়ার ঘরটি তৈরি হয়েছিল বাঁচা মিয়ার ঘোনার দুর্গম পাহাড়ের পাদদেশে (ঢালুতে)। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বাড়িটি গত জুন মাসে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিল। এরপর তাদের সরে যেতে মাইকিং করে। কিন্তু তারা সরেনি। আজ ভারী বৃষ্টিতে পাহাড়ধসে বাড়িটি ধসে পড়ে। এতে মাটিচাপায় চার ভাইবোনের মৃত্যু হয়।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দীন খন্দকার বলেন, এক পরিবারের চার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাস্থলে মাটিচাপা পড়ে তারা। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহগুলো কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

পৌরসভার মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, শহরের অভ্যন্তরে থাকা ছোট–বড় ১২টি সরকারি পাহাড় দখল করে বসতি করছে লাখো ভাসমান মানুষ। গত জুন মাসে পাহাড়ের ঢালুতে ঝুঁকি নিয়ে বসতি করা প্রায় ৯০০ পরিবারের তালিকা তৈরি করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে একই পরিবারের চারজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। গত ১০ বছরে একাধিক পাহাড়ধসের ঘটনায় ছয় সেনাসদস্যসহ অন্তত ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক মুজিবুল হক বলেন, মঙ্গলবার সকাল ছয়টা থেকে বুধবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টিপাত আরও বাড়তে পারে। এতে আরও পাহাড়ধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে।