'জয়িতা' পুরস্কার পাওয়া শ্রীমঙ্গলের অমরী সড়ক দুর্ঘটনায় নিভে যেতে বসেছেন

সড়ক দুর্ঘটনায় নিভে যেতে বসেছেন ‘জয়িতা’ অমরী রানি পাল। ছবি: প্রথম আলো
সড়ক দুর্ঘটনায় নিভে যেতে বসেছেন ‘জয়িতা’ অমরী রানি পাল। ছবি: প্রথম আলো

‘জয়িতা’ অর্থ বিজয়ী নারী। সংগ্রামী অপ্রতিরোধ্য নারীকে ‘জয়িতা’ নামে আখ্যায়িত করা হয়। অমরী রানি পাল ছিলেন তেমনই একজন ‘জয়িতা’। ছিলেন বলতে হচ্ছে, কারণ যিনি সব প্রতিকূলতা জয় করে অদম্য ইচ্ছাকে পুঁজি করে এগিয়েছিলেন, তিনি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আজ নিভে যেতে বসেছেন।

তৃণমূলে ক্ষমতায়নের উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে ‘জয়িতা’ হয়েছিলেন অমরী। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে ‘জয়িতা’ পুরস্কার দেওয়া হয় নারীদের। এই কার্যক্রমের আওতায় ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ এবং বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে ‘অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী’ ক্যাটাগরিতে ‘জয়িতা’ সম্মান পান মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের অমরী রানি পাল।

উপজেলার শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের অমরী রানি পাল সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রায় এক বছর ধরে শয্যাশায়ী। ২০১৭ সালের ২২ সেপ্টেম্বর শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নের পাশে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে তাঁর সারা শরীর অচল হয়ে পড়েছে। ওই দিন তিনি দেশীয় যান টমটমে করে শহর থেকে নিজের বাড়িতে ফিরছিলেন। পথে একটি বাস টমটমকে ধাক্কা দিলে তিনি গুরুতর আহত হন। দীর্ঘদিন হাসপাতালে ছিলেন। এখন তাঁকে প্রতিদিন দুই বেলা থেরাপি নিতে হয়। ওষুধ খেতে হয়। এ কারণে দৈনিক ৭০০-৮০০ টাকা খরচ হয়।
চিকিৎসকেরা উন্নত চিকিৎসার জন্য জোর দিলেও দারিদ্র্যের কারণে তাঁর পরিবারের পক্ষে এত খরচ করা সম্ভব হচ্ছে না।

অমরী রানি পাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘জীবনের স্বপ্ন ক্রমশ অন্ধকারে দিকে চলে যাচ্ছে, শুধু একটি দুর্ঘটনা ও আর্থিক দৈন্যর জন্য। আমি আবারও উঠে দাঁড়াতে চাই।’

অমরী রানির স্বামী সুনীল পাল প্রথম আলোকে বলেন, সংসারের শত অভাব-অনটনের মধ্যেও তাঁর স্ত্রী মেধা ও পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে পাঁচ বছর আগে শ্রীমঙ্গল শহরতলির কলেজ রোডে গড়ে তুলেছিলেন আঁচল টেইলার্স নামের একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। অমরীর সড়ক দুর্ঘটনার কারণে এখন সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি জানান, একটি প্রতিষ্ঠানে স্বল্প বেতনের চাকরি করেন তিনি। সংসার চালিয়ে স্ত্রীর চিকিৎসার খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন। সংসারে তাঁদের দুটি ছেলেমেয়ে রয়েছে। ছেলে পঞ্চম পাল স্থানীয় ভিক্টোরিয়া উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে ও মেয়ে আঁচল পাল দেওয়ান শামসুল ইসলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে।

অসুস্থতাকে দূরে ঠেলে আবার ‘জয়িতা’ হতে চান অমরী রানি পাল। এ কারণে সমাজের বিত্তবানদের সহায়তা চেয়েছেন তিনি। সহায়তার জন্য সুনীল পালের এই নম্বরে ০১৭৩২৩৭১২৩৯ ফোন করা যাবে।