গুজবের শহর রাজশাহী

রাজশাহী নগরের সড়কে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের প্রচারবোর্ড। ছবি: শহীদুল ইসলাম
রাজশাহী নগরের সড়কে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের প্রচারবোর্ড। ছবি: শহীদুল ইসলাম

সিটি করপোরেশন নির্বাচনের চার দিন আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজশাহী নগর যেন গুজবের নগরে পরিণত হয়। বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি, তার গুলিবিদ্ধ পায়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ ছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুকে থানায় আটক করা এবং পর্যটন মোটেলে হামলার খবর শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

এসব খবরের কোনোটিরই ভিত্তি পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত বুলবুলের নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকেই স্ট্যাটাস দেওয়া হয়, বুলবুল আহত হননি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ছবিটি আগের। এই গুজব ছড়ানোর প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। গতকাল সকালে বিএনপির নেতারা সাংবাদিকদের ফোন করে জানান, রাজশাহী পর্যটন মোটেলে বিএনপির এক নেতার গাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর করা হয়েছে। এই খবর সংগ্রহ করতে পর্যটন মোটেলে গেলে মোটেলের ব্যবস্থাপক মোতাহার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মোটেলে এ ধরনের ঘটনাই ঘটেনি।

দুপুরের দিকে যুবদলের এক নেতা প্রথম আলোকে ফোন করে জানান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক ও রাজশাহীর তানোর পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমানকে বিমানবন্দর থানার পুলিশ আটক করেছে। এ ব্যাপারে তথ্য নেওয়ার জন্য ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজিবুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, তানোর পৌরসভার মেয়রকে একটা সন্দেহের কারণে আনা হয়েছিল। এ খবর পেয়ে মিজানুর রহমান মিনু ও শফিকুল হক থানায় এসেছিলেন। তানোরের মেয়রসহ তাঁরা তিনজন তখনই চলে গেছেন।

এদিকে দুপুর ১২টার দিকে নগরের সাহেববাজার এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের ‘কেমন মেয়র চাই’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠান ধারণ করা হচ্ছিল। এ সময় বিএনপির এক সমর্থকের প্রশ্নকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের কর্মীদের মধ্যে হট্টগোল হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারা শহরে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়েছে। ঘটনাটি যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে অবশ্য বিকেল ৪টা ২৪ মিনিটে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের নামে থাকা ফেসবুক পেজ থেকে বলা হয়, ‘মেয়র প্রার্থী বুলবুল ভাইকে কেউ হামলা করেনি, যে ছবিটা পোস্ট করা হয়েছে, এটা আগের এবং পুলিশের গুলিতে আহত হওয়ার ছবি। কেউ অপপ্রচার করবেন না।’

এরপরে বিকেলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমস্য এস এম কামাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিএনপি রাজশাহীবাসীর সহানুভূতি পাওয়ার জন্য এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যাচার করেছে। সংবাদ সম্মেলনে এম এম কামাল নতুন একটি গুজবের কথা শোনান। তিনি বলেন, ‘বুধবার রাতে আওয়ামী লীগের কাছে খবর আসে যে একটি গাড়িতে ১০ কোটি নগদ টাকা আছে। বিএনপির নেতা ও কর্মীরা এই টাকা বস্তি এলাকায় বিলি করবেন। একটি গাড়িকে অনুসরণ করেন ছাত্রলীগের এক নেতা। ওই গাড়ির আঘাতে আহত হয়ে এখন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।’