যৌন হয়রানির অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রমজান আলীর শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। ছবি: প্রথম আলো
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রমজান আলীর শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। ছবি: প্রথম আলো

যৌন হয়রানির অভিযোগে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রমজান আলীর শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। রমজান আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিক্যুলার বায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। 


মানববন্ধন শেষে মহিলা পরিষদ, দিনাজপুর জেলা শাখার সভাপতি কানিজ রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নারীর অগ্রযাত্রায় প্রধান বাধা যৌন হয়রানি। বিশেষ করে যাঁরা মানুষ গড়ার কারিগর, তাঁরা যৌন নিপীড়ক হলে এই অগ্রযাত্রা থেমে যাবে। যৌন নিপীড়ক কোনো ব্যক্তির শিক্ষক থাকার অধিকার নেই।

রমজান আলীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি গৃহকর্মীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন এবং ছাত্রীকে যৌন হয়রানির চেষ্টার সত্যতা পেয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি রমজান আলীকে চাকরিচ্যুত করার এবং যত দিন চাকরিচ্যুত করা না হয়, তত দিন সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে রাখার সুপারিশ করে।

মহিলা পরিষদ, দিনাজপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মারুফা বেগম বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষক রমজানের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি মহিলা পরিষদ পৃথকভাবে তদন্ত করেছে। দুটি তদন্তেই ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, শিক্ষক রমজানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানির মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটতেই থাকবে।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষক রমজানকে সাত দিনের মধ্যে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে। এ নিয়ে আজ প্রথম আলোয় ‘অনৈতিক কাজে জড়িতদের শাস্তি দেওয়ার দাবি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

বছর ১৮ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে রমজান আলীর তত্ত্বাবধান থেকে অব্যাহতি চেয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন এক ছাত্রী। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি ছাত্রীর অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। তবে সে সময় প্রশাসন রমজান আলীকে ‘নীতিবিবর্জিত’ শিক্ষক উল্লেখ করলেও ঘটনাটিকে ‘মানসিক নির্যাতন’ বলে মন্তব্য করে। রমজান আলীকে শুধু কঠোরভাবে সতর্ক করে এমএস ডিগ্রি তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব থেকে এক বছরের জন্য অব্যাহতি দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এদিকে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের প্রতিকার চেয়ে এ বছর ১৬ জানুয়ারি রমজান আলীর স্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে লিখিত অভিযোগ দেন।

এ বিষয়ে গঠিত সাত সদস্যের কমিটি রমজান আলীর স্ত্রীর করা অভিযোগের সত্যতা পায়। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসস্থলে গৃহকর্মীর সঙ্গে রমজান আলীর অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনের প্রমাণও পায় তদন্ত কমিটি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. সফিউল আলম এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, রমজান আলীর বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে রমজান আলীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কেন নেওয়া হবে না, জানতে চেয়ে তাঁকে কৈফিয়ত তলবের চিঠি দেওয়া হয়েছে।