দুদকের ফাঁদে ঘুষের টাকাসহ 'ধরা' পড়লেন পল্লী বিদ্যুতের দুই কর্মকর্তা

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ফাঁদে পড়ে ঘুষের টাকাসহ গ্রেপ্তার হয়েছেন কুড়িগ্রাম পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দুই কর্মকর্তা। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ি ইউনিয়নের শিমুলতলা বাজার এলাকার একটি দোকানের সামনে থেকে তাঁদের আটক করা হয়।

আটক দুই কর্মকর্তা হলেন নির্বাহী প্রকৌশলী মোমিনুর রহমান (৪৩) ও একই কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম (৫০)। মোমিনুর দিনাজপুর জেলার চিরির বন্দর থানার জোতরাম ধনপুর গ্রামের মৃত আবদুল ওয়াহেদ শাহর ছেলে। তাঁর কাছ থেকে ঘুষের ৩০ হাজার টাকাসহ মোট ৯২ হাজার টাকা পাওয়া যায়। জহুরুল ইসলাম গাইবান্ধা জেলার দক্ষিণ ধানঘড়া গ্রামের মৃত ভোলা মিয়ার ছেলে। তাঁর কাছ থেকে ঘুষের ১০ হাজার টাকাসহ মোট ৪৮ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় গতকাল রাত ১১টা ৫০ মিনিটে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় রংপুরের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে লালমনিরহাট সদর থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় আটক দুজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

দুদক ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বড়বাড়ি ইউনিয়নের উমাপতি হরনারায়ন গ্রামের হছিয়ত উল্লাহ মণ্ডলের ছেলে মেসার্স এম এস ট্রেডার্সের প্রতিনিধি তমির উদ্দিন দুদকে অভিযোগ করেন, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মোমিনুর রহমান ও সহকারী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করেন না। প্রতিনিয়ত ঠিকাদারি কাজের বিল পাসসহ বিদ্যুতের খুঁটি ও মালামাল নিতে গেলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে খুঁটিপ্রতি ৩০০-৪০০ টাকা, ট্রান্সফরমার-প্রতি ৫০০ টাকা, সার্ভিস তার প্রতি কিলোমিটার এক হাজার টাকা ঘুষ হিসেবে দিতে হয়। ঘুষ না দিলে তাঁরা কোনো মালামাল সরবরাহ করেন না। এবার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ-সংযোগ স্থাপনের জন্য চাহিদা মোতাবেক ১২০টি খুঁটি ও কিছু বৈদ্যুতিক মালামাল সরবরাহের জন্য অনুরোধ করলে, নির্বাহী প্রকৌশলী চাহিদাপত্রের সঙ্গে নিজের জন্য ৩০ হাজার টাকা এবং সহকারী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলামের জন্য আরও ১০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন।

তমির উদ্দিনের অভিযোগ পেয়ে সহকারী পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি ফাঁদ দল গঠন করা হয়। নিরপেক্ষ সাক্ষীসহ ফাঁদ দলের সদস্যদের উপস্থিতিতে গত বুধবার সকালে তমির উদ্দিনের সরবরাহ ঘুষের টাকার নোট নম্বরের পক্ষে সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। দুদকের ফাঁদ দলের সদস্যরা তমির উদ্দিনকে অনুসরণ করতে থাকেন।
গতকাল সন্ধ্যায় লালমনিরহাটের শিমুলতলায় এক দোকানের সামনে গাড়ি থেকে নেমে মোমিনুর রহমান ও জহুরুল ইসলাম উপস্থিত হন। তমির উদ্দিনের কাছ থেকে ঘুষের টাকা নিয়ে মালামাল সরবরাহের চাহিদাপত্র নেন। ওই সময় আশপাশে ওত পেতে থাকা দুদক ফাঁদ দলের সদস্যরা নিরপেক্ষ সাক্ষীদের উপস্থিতিতে মোমিনুর রহমান ও জহুরুল ইসলামকে চ্যালেঞ্জ করেন। ওই দুই কর্মকর্তা ঘুষ নেওয়ার কথা স্বীকার করেন।

একই সময় মোমিনুর রহমানের প্যান্টের পকেট তল্লাশি করে ১২ হাজার টাকা এবং গাড়িতে রক্ষিত তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাগ থেকে আরও ৫০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। জহুরুল ইসলামের প্যান্টের পকেট তল্লাশি করে ৩৮ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এই টাকার উৎস নিয়ে যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তাঁরা।

দুদক কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দুদক আইন অনুসরণ করে এই অভিযান চালানো হয়েছে।

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, রংপুরের উপপরিচালক মোজাহার আলী সরদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, প্রভাবশালী বা ক্ষমতাধর যে-ই হোন না কেন, দুর্নীতি করে কেউ পার পাবেন না।

লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজ আলম বলেন, এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। এ মামলায় আটক দুই প্রকৌশলীকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে তাঁদের লালমনিরহাট জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।