রাজশাহীতে বিএনপি এই চাঙা, এই উৎসাহে লাগাম

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

রাজশাহী সিটি নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা, জনসংযোগ, মাঠ পরিস্থিতি—সবকিছুতেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বেশ এগিয়ে। অতীতের নির্বাচন ও ভোটের হিসাব-নিকাশ বিশ্লেষণে বিএনপিও পিছিয়ে নেই। যে কারণে ভোটের মাঠে হঠাৎ হঠাৎ দলটির নেতা-কর্মীরা চাঙা হয়ে উঠছেন। এসবের মধ্যেই কিছু কিছু ঘটনা বিএনপির নেতা-কর্মীদের উৎসাহের লাগামকে পেছন থেকে টেনে ধরছে।

১৭ জুলাই নিজেদের জনসভায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে ভোটের মাঠে বিএনপি নেতা-কর্মীদের তেমন একটা তৎপরতা দেখা যায়নি। কিন্তু গত বুধবার সকাল থেকে রাজশাহী শহরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমান তালে পাল্লা দিয়ে জনসংযোগে নামেন। পরিস্থিতিটা এমন ছিল, ‘কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান।’

গত বৃহস্পতিবার দুপুরের পর হঠাৎ করেই ফেসবুকে অপপ্রচার শুরু হয়, বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বিষয়টি যে কেবলই গুজব, তা জানাজানি হওয়ার পর বিকেল থেকেই বিএনপির প্রচারে ভাটা পড়ে। গতকাল শুক্রবার দুপুরের পর নির্বাচনের মাঠ সরব হলেও বিএনপি ছিল যথেষ্ট নীরব। জানা যায়, শহরের শীর্ষ নেতাদের অনেকে বাসা থেকেই বের হননি। দলের একাধিক নেতা জানান, পুরো বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বিএনপির নেতাদের অনেকই বিব্রত।

বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন গতকাল দুপুরের পর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু ও ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকে নিয়ে নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকায় জনসংযোগ করেন। এর বাইরে দলের নেতাদের তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।

মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল প্রথম আলোকে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্বাচনে জোর করে বিজয়ী হওয়ার জন্য জেলার বাইরে থেকে অর্ধলক্ষাধিক লোক ভাড়া করে নিয়ে এসেছেন। বহিরাগত ব্যক্তিদের থাকার জন্য শহরের প্রতিটি আবাসিক হোটেল দখল করে নিয়েছে।

প্রথম ধাক্কা
১৭ জুলাই বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর নেতৃত্বে শহরের সাগরপাড়া এলাকায় জনসংযোগ করে যাচ্ছিল জেলা ছাত্রদল। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীদের অবস্থানের অদূরে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিএনপি প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের ওপর দোষ চাপায়।

২১ জুলাই জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টুর টেলিফোন আলাপের অডিও ফাঁস হয়। তাতে মন্টু বিএনপির অপর এক নেতাকে বলেছেন, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাটি তাঁরাই ঘটিয়েছেন। এ ঘটনার পর থেকে বিএনপি রাজশাহীর নির্বাচনী কাজে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়ে।

বুধবার বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ইকবাল মাহমুদের উপস্থিতিতে ভোটের মাঠে বিএনপি আবারও চাঙা হয়ে ওঠে। এদিন জেলা বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রচার-প্রোপাগান্ডায় আমাদের প্রতিপক্ষ প্রার্থী এগিয়ে। বিভিন্ন কারণে কয়েক দিন আমরা কোণঠাসা ছিলাম। কিন্তু বিএনপি এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসন আমাদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু বিনা যুদ্ধে একবিন্দু ছাড় দেওয়া হবে না।’

দ্বিতীয় ধাক্কা
বুধবার সারা দিন এবং বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত বিএনপি জনসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমানতালেই পাল্লা দিয়ে যায়। এদিন সকালে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ভোটের দিন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের ধরে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

এরপর দুপুরে দিকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে, মেয়র প্রার্থী বুলবুল পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় মুহূর্তের মধ্যে পুরো শহরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। গুজবের কয়েক ঘণ্টা পর বিকেল চারটার দিকে বুলবুলের বিবৃতিতে উত্তেজনার প্রশমন ঘটে। এ সময় তিনি তাঁর নির্বাচনসংক্রান্ত ফেসবুক আইডি থেকে জানান, গুলিবিদ্ধ হননি।

দুপুরের আগে নগরীতে আরও একটি গুজব ছড়িয়ে পড়ে। বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা অভিযোগ করেন, সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু ও মেয়র প্রার্থী বুলবুলকে বিমানবন্দর থানার পুলিশ আটক করেছে। পরে জানা যায়, তাও গুজব।

আত্মপক্ষ সমর্থন করেনি বিএনপি
বুলবুলের গুলিবিদ্ধ হওয়ার গুজব নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগ। সেখানে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য এস এম কামাল হোসেন বলেন, রাজশাহীবাসীকে বিভ্রান্ত করার জন্য বুলবুল সাহেব নিজেকে আহত দাবি করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। এর আগেও তারা নিজেদের সভায় বোমা মেরে আওয়ামী লীগের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করেছে।

গুজব সম্পর্কে আওয়ামী লীগ সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির ওপর চড়াও হয়েছে। আর ঘটনা বিএনপিকে ঘিরে ঘটলেও এ বিষয়ে দলটি আত্মপক্ষ সমর্থন করে কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি।

বিএনপির একাধিক স্থানীয় নেতা মনে করেন, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ও বুলবুলের গুলিবিদ্ধ হওয়ার গুজবের ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত ছিল। ব্যাখ্যা না দেওয়ায় মনে হতে পারে, দুটি ঘটনার পেছনে বিএনপির হাত আছে। সাধারণ ভোটারদের অনেকেও এখন তাই ভাবতে শুরু করছেন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রচার-প্রোপাগান্ডায় যতই এগিয়ে থাকুক, ভোটের হিসাব-নিকাশ আমাদের অনুকূলে। ভোটের দিন দেখা যাবে নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে।’