অপহরণকারীরা সাদা স্ট্যাম্পে সই নিয়েছে: পারভেজ

পারভেজ হোসেন সরকার
পারভেজ হোসেন সরকার

রাজধানীর লালমাটিয়ায় থেকে অপহৃত কুমিল্লার তিতাস উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা পারভেজ হোসেন সরকার (৪০) বলেছেন, ‘অপহরণকারীরা আমার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে নাকে একটা রুমাল ধরে। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই। আমার যখন জ্ঞান ফিরে আসে, তখন তারা আমাকে গাড়ির ভেতরে দুটি সাদা স্ট্যাম্পে ইংরেজি ও বাংলায় দুটি স্বাক্ষর নেয়। তবে কেন এই স্বাক্ষর নিয়েছে, আমি বুঝছি না।’

আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে পারভেজ হোসেন সরকার লালমাটিয়ার সি ব্লকের বাসার নিচে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

পারভেজ বলেন, ‘শুক্রবার নামাজ পড়ে বাসায় ঢোকার মুখে একজন আমাকে সালাম দেয়। আরেকজন পেছন থেকে এসে আমাকে টেনে গাড়িতে তুলে নেয়। গাড়িতে তুলেই তারা আমাকে মুখোশ পরিয়ে দেয়। মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে নাকে একটা রুমাল ধরে। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরে আসে, তখন তারা আমাকে গাড়ির ভেতরে বসেই দুটি সাদা স্ট্যাম্পে ইংরেজি ও বাংলায় দুটি স্বাক্ষর নেয়। তবে কেন স্বাক্ষর নিয়েছে আমি বুঝছি না। তারা হয়তো আমাকে কোনো চাপে রাখতে এটি করেছে। স্বাক্ষর নেওয়ার পর আমাকে কাঞ্চন ব্রিজের পাশে নামিয়ে দেয়। এরপর আমি বাসায় ফোন দিই, তারা গিয়ে ৩০০ ফুট এলাকা থেকে আমাকে নিয়ে আসে।’

পারভেজ হোসেন সরকার বলেন, ‘আমার সঙ্গে কারও কোনো ব্যবসায়িক বিরোধ নেই। তবে এলাকাতে রাজনৈতিক বিরোধ আছে। আমি এক বছর ধরে এলাকায় যাই না। কারণ আমার ওপর আগেও হামলা হয়েছিল।’

পারভেজ হোসেন সরকার বলেন, ‘আমাকে মারধর করা হয়নি, তবে অজ্ঞান করা হয়েছিল। আমাকে সহযোগিতা করায় আমি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও দেশের গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানাই।’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পারভেজ সরকার কুমিল্লা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। এ কারণে তাকে অপহরণ করা হয়েছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আসলে বুঝতেছি না কেন হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচন করব।’

গত শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বাসায় ফেরার পথে অপহরণ করা হয়েছিল পারভেজ সরকারকে

বেশ কিছুদিন ধরেই নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন কুমিল্লার আওয়ামী লীগ নেতা ও তিতাস উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান পারভেজ সরকার। স্ত্রীকে বলেছিলেন, গাড়ি ছাড়া ছেলেদের নিয়ে বাইরে না যেতে। নিজেও একা ঘোরাফেরা করতেন না। ছয় দিন আগে হঠাৎ ছেলেকে নিয়ে রিকশায় বা হেঁটে স্কুলে যেতে মানা করেন। গাড়ি ছাড়া বাসা থেকে একদম বের হতে নিষেধ করে দেন।

অবশ্য তুলে নিয়ে যাওয়ার আট ঘণ্টা পর শুক্রবার রাত ১০টায় একটি মুঠোফোন থেকে পারভেজ সরকার তাঁর স্ত্রীকে জানান, তিনি ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। এরপর ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ১০ মিনিট পর আবার স্ত্রীকে ফোন করে জানান, তিনি রাজধানীর ৩০০ ফুট এলাকায় আছেন। এখান থেকে তাঁকে নিয়ে যেতে বলেন। পরে পরিবারের সদস্যরা গাড়ি নিয়ে সেখানে যান।

পারভেজের পরিবার এ জন্য তাঁর রাজনৈতিক বিরোধকে দায়ী করছেন। পারভেজ সরকার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-২ আসন (তিতাস-হোমনা) থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। বর্তমানে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য তিনি। তিনি ঠিকাদারি ব্যবসা করতেন।