রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ

জমজমাট প্রচারণা, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ, আচরণবিধির খড়্গ—সব ছাপিয়ে তিন শহরের মানুষের চোখ এখন কারা হচ্ছেন নগরের অভিভাবক। কয়েক ঘণ্টা পরেই একযোগে সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহীতে ভোট শুরু হবে। 

তিন সিটিতে মোট ভোটার ৮ লাখ ৮২ হাজার ৩৬ জন। ৩৯৫টি ভোটকেন্দ্রে এই ভোটাররা ভোট দেবেন।

সোমবার সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ভোট দিয়ে এই তিন সিটির ভোটাররা তাঁদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন।

ইতিমধ্যে ভোট আয়োজনের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। রোববার সকাল থেকেই ব্যালট বক্স থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তিন সিটিতে বিজিবি নেমেছে ৪৪ প্লাটুন। এর সঙ্গে কয়েক হাজার পুলিশ, র‍্যাব, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের বিভিন্ন বাহিনী কাজ শুরু করেছে। শহরগুলোতে চলছে টহল।

৩০ জুলাই সোমবার সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত এই কেন্দ্রগুলোতে ভোট গ্রহণ চলবে। বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে তিনি সিটিতে মেয়র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন ১৮ জন। কাউন্সিলর পদে সংরক্ষিত আসনসহ ৫২২ জন এবার প্রার্থী হয়েছেন।

একই দিনে হতে যাওয়া এই তিন সিটির সর্বশেষ মেয়র ছিলেন বিএনপি–দলীয়। তাঁদের সবাই এবার মনোনয়ন পাননি। তিন সিটিতেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির ভালো প্রতিযোগিতা হওয়ার আশা করছেন ভোটাররা।

এবার বরিশালের ১০টি, সিলেটে ২টি ও রাজশাহীতে ২টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হবে। এই তিন সিটিতেও ২৫৭টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনে ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন ভোটার। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন ও পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ জন। ১৩৪টি ভোটকেন্দ্রের ৯২৬টি ভোট কক্ষে এই ভোটাররা রাত পোহালেই শহরের অভিভাবক বেছে নেবেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বাসদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ আরও তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদের জন্য লড়ছেন। সিলেট সিটিতে ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ড এবং ৯টি সংরক্ষিত আসন রয়েছে। এসব ওয়ার্ডে প্রার্থী হিসেবে প্রতিযোগিতা করছেন ১৮১ জন।

এই সিটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ (কামরান) ও বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর মধ্যে ভোটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে আশা করছেন নগরবাসী। আরিফুল হক আগের মেয়াদের মেয়র ছিলেন। তবে বিএনপির জোটসঙ্গী জামায়াত এবার স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করায় বিএনপির জন্য কিছুটা অস্বস্তিরও বটে। সিলেটে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে ৮০টি।

বরিশালের আগের মেয়াদের মেয়র এবার মনোনয়ন পাননি। বিএনপি এবার ভিন্ন একজনকে প্রার্থী করেছে। বাসদ এই সিটিতে একজন নারীকে মেয়র হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে। মনীষা চক্রবর্তী নামের এই প্রার্থী প্রচারেও ভোটারদের নজর কেড়েছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়ও হন।

এই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট দেবেন ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২১ হাজার ৪৩৬, নারী ভোটার ১ লাখ ২০ হাজার ৭৩০ জন। ছয়জন প্রার্থী হয়েছেন মেয়র পদের জন্য। ভোটকেন্দ্র আছে ১২৩টি এবং ভোট কক্ষ ৭৫০টি। তবে তিন সিটির মধ্যে বরিশালে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি—১১২টি। সাধারণ ৩০টি ও সংরক্ষিত আসনে ১০টি ওয়ার্ডের জন্য ১২৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থী।

ধরপাকড়, অভিযোগ, পথসভায় বোমা হামলা—সব মিলিয়ে তিন সিটির মধ্যে রাজশাহী ছিল বেশ আলোচিত। ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন ভোটার নিয়ে রাজশাহী সিটি। নারী ভোটার আছেন ১ লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জন এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮৫ হাজার ৮৫ জন। রাজশাহীতে পাঁচজন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ সিটির ১৩৮টি ভোটকেন্দ্রে ১ হাজার ২৬টি ভোট কক্ষে ভোটগ্রহণ হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র ৬৫টি। সংরক্ষিত ও সাধারণ ওয়ার্ডের ৪০টিতে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন ২১২ জন।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে এই তিন সিটির নির্বাচন বেশ আলোচনার জন্ম দিচ্ছে। নির্বাচন কমিশনও বলছে জাতীয় নির্বাচনের আগে এই ভোট তাদের জন্য একটি মহড়া।