সিলেটের কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, একজন আটক

আরিফুল হক চৌধুরী
আরিফুল হক চৌধুরী

সিলেট সিটির ৮, ৯, ১৮ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের মোট ছয়টি কেন্দ্রে জাল ভোটের অভিযোগে উত্তেজনা দেখা দেয়। প্রার্থীদের কর্মীদের মধ্যে মারামারি, ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় পুলিশ একজনকে আটক করেছে।

মেয়র পদে বিএনপি-মনোনীত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী দুপুরে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে ভোট বাতিলের লিখিত আবেদন করেন। এতে তিনি ৪১টি কেন্দ্রের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেন। এর আগে নগরের কাজী জালালউদ্দিন বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শন করে নিজ কার্যালয়ে গিয়ে বলেন, এবার ভোট চুরির ঘটনা সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এমনটা সিলেটে আগে কখনো হয়নি। মানুষের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার আন্দোলনের ডাক দেবেন বলে তিনি জানান।

এদিকে মেয়র পদে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) মনোনীত প্রার্থী মো. আবু জাফর ‘নজিরবিহীন কারচুপির’ অভিযোগ এনে সব কেন্দ্রের ভোট বাতিলের আবেদন করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামানের কাছে।

৮ নম্বর ওয়ার্ডে জাল ভোটের অভিযোগ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
সিলেট নগরের পাঠানতুলায় ৮ নম্বর ওয়ার্ডে শাহজালাল জামিয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসায় ২৮০৩ (পুরুষ ও মহিলা), ২২০২ (পুরুষ), ১৯৮৬ (মহিলা)—এই তিনটি কেন্দ্রে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীদের কর্মীদের মধ্যে প্রথমে উত্তেজনা শুরু হয়। এক পক্ষ অপর পক্ষের বিরুদ্ধে জাল ভোটের অভিযোগে মারপিট ও ইটপাটকেল ছোড়া শুরু করে। পরে আওয়ামী লীগ-মনোনীত মেয়র প্রার্থীর পক্ষেও ওই সব কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পুরুষ কেন্দ্রে (২২০২) আওয়ামী লীগ-সমর্থিত দুই কাউন্সিলর প্রার্থী মো. ইলিয়াছুর রহমান (ঝুড়ি প্রতীক) ও জগদীশ চন্দ্র দাশের (ট্রাক্টর প্রতীক) কর্মীরা একে অপরের বিরুদ্ধে জাল ভোটের অভিযোগ তুলে কেন্দ্রে ঢুকে যান। কেন্দ্রের ভেতরে তারা মারামারি শুরু করেন। কেন্দ্রের বাইরেও দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ভোট বন্ধ থাকে।

পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। দুপুর ১২টার দিকে ভোট নেওয়া আবার শুরু হয়। মিনিট পাঁচেক ভোট চলার পর পুরুষ ও মহিলা কেন্দ্রের (২৮০৩) ৭ নম্বর বুথে দরজা বন্ধ করে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের পক্ষে নৌকা প্রতীকে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। টানা ১০ মিনিট জাল ভোটের পর পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। ওই সময় ভোট নেওয়া আবার বন্ধ হয়ে যায়।

এ ব্যাপারে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছুটা সমস্যা হয়েছে। সমাধানের চেষ্টা করছি।’ জাল ভোটের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি দেখছি।’

এ সময় বিএনপির মেয়র প্রার্থীর কর্মীরা কেন্দ্রের বাইরে মিছিল করলে আওয়ামী লীগের কর্মীরা তাঁদের ধাওয়া দেন। এরপর থেমে থেমে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলতে থাকে।

৯, ১৮ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে হট্টগোল
সিলেট সিটির ৯, ১৮ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের তিনটি ভোটকেন্দ্রে ভোট নেওয়ার সময় হট্টগোল হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী জালালউদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় (উঁচা সড়ক) কেন্দ্রে ভোট নেওয়া এখন বন্ধ।

২৬ নম্বর ওয়ার্ডের রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের পুরুষ বুথে বেলা পৌনে ১১টার দিকে জোর করে একদল যুবক ঢুকে পড়ে। আর নগরীর ৯ নম্বর ওয়ার্ডে শাহজালাল জামিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়েছে।

কাজী জালালউদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা ১১টা পর্যন্ত ৪০০-র মতো ভোট পড়ে। এরপরই একদল যুবক সেখানে ঢুকে জোর করে ব্যালটে সিল মারার চেষ্টা করে। তখন গোলযোগের শুরু। বাইরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। একপর্যায়ে সেখান থেকে সব দলের প্রার্থীদের এজেন্টরা বের হয়ে আসেন।

নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই কেন্দ্রে সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট চলছিল। কিন্তু বেলা পৌনে ১১টার দিকে একদল যুবক হঠাৎ করেই বিদ্যালয়ের তিনতলার একটি বুথে ঢুকে পড়ে। এটি পুরুষদের বুথ। কক্ষে ঢুকেই তারা জোর করে সিল মারার চেষ্টা করছিল। এসব যুবকের কাছে ভোটের কোনো নম্বর ছিল না। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীরা কেন্দ্রে ঢুকতে চাইলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. আমিরুল ইসলাম তাঁদের বাইরে থাকার জন্য নির্দেশ দেন। তখন গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কথা-কাটাকাটি হয়। পরে বুথ থেকে তিনজনকে ধরে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কক্ষে নিয়ে আসে পুলিশ। বুথ দখলের সময় কেন্দ্রে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জানান, সকাল ১০টা পর্যন্ত নয়টি বুথে ৪৯৪ ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। এ কেন্দ্রে যেসব যুবক ঢুকে পড়েছিলেন, তাঁদের বুকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের নৌকা প্রতীকের ব্যাজ ছিল।

দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ফজল এ কেন্দ্রের পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন।

বেলা পৌনে ১১টার দিকে শাহজালাল জামিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এ সময় কেন্দ্রে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়।