ত্রিপুরা শিশু ধর্ষণের ঘটনায় সিএইচটি কমিশনের নিন্দা

খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় নয় বছরের শিশুকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে খুনের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন (সিএইচটি কমিশন)। আজ সোমবার পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনটি এক বিবৃতিতে অবিলম্বে এ ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে।

খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালার নয় মাইল এলাকায় চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী কৃত্তিকা ত্রিপুরাকে (১০) ধর্ষণের পরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
সিএইচটি কমিশনের বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামে একের পর এক হত্যাকাণ্ড, অপহরণ, নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের দিক থেকে দৃশ্যমান কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ দেখা যায়নি; যা রাষ্ট্রীয় বিচারহীনতা সংস্কৃতির অন্যতম উদাহরণ। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের এমন নির্লিপ্ত ভূমিকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, চলতি বছরে গত ছয় মাসে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সীতাকুণ্ড ও রাউজানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীর ওপর আক্রমণ, ধর্ষণ, হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মতো ঘটনা কমপক্ষে ১৫টি সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে ২২ জানুয়ারি রাঙামাটির বিলাইছড়ির দুই মারমা তরুণীকে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির ঘটনা, ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিন খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় এক ত্রিপুরা কিশোরীকে ধর্ষণ, ১৩ এপ্রিল বান্দরবানের আলীকদমে এক ত্রিপুরা কিশোরীকে গণধর্ষণ, ১৮ মে সীতাকুণ্ডে দুই ত্রিপুরা কিশোরীকে ধর্ষণের পরে হত্যা, ১৭ জুন বান্দরবানের লামায় নিজ বাড়িতে মারমা কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা, ২১ জুন খাগড়াছড়ির জেলা পরিষদ পার্কে এক কিশোরীকে গণধর্ষণ, ৫ জুলাই চট্টগ্রামের রাউজানে এক বৌদ্ধমন্দিরের অনাথ আশ্রমে এক মারমা কিশোরীকে হত্যা, ৯ ও ১৭ জুলাই কাউখালী ও মহালছড়িতে দুই কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়। সর্বশেষ ২৮ জুলাই খাগড়াছড়ির নয় মাইল এলাকায় চতুর্থ শ্রেণির কৃত্তিকা ত্রিপুরাকে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা উল্লেখযোগ্য। দুর্বৃত্তরা এতটাই নারকীয় উল্লাসে মেতেছিল যে নয় বছরের ছোট্ট মেয়েটিকে ধর্ষণের পর কুপিয়ে, তার পায়ুপথে গাছের গুঁড়ি ঢুকিয়ে হত্যা করেছে।

কমিশনের বিবৃতিতে বলা হয়, এ ধরনের নারকীয় হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও অপহরণের মতো জঘন্য ঘটনাগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামে একের পর এক সংঘটিত হওয়ার পরেও এসব অপরাধের কোনো বিচার ও অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ না করার দায় সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। শুধু নারীর ওপর নির্যাতন, ধর্ষণ, অপহরণ, হত্যার ঘটনাই নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে গত সাত-আট মাসে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক কর্মী, সাধারণ জনগণের ওপর হামলা ও হত্যার ঘটনায় কমপক্ষে ২৫ জন নিহত ও আরও অনেকে আহত হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে ও পত্রিকার মাধ্যমে জানা যায়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন পাহাড়ের এ বিভীষিকাময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য যত দ্রুত সম্ভব যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের প্রতি জোর দাবি জানায়। একই সঙ্গে এসব নৃশংস ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও জোর আহ্বান জানায়।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন সিএইচটি কমিশনের তিন কো-চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল, এলসা স্টামাতোপৌলো ও মির্না কানিংহাম কেইন। বিজ্ঞপ্তি