তবু লেখাপড়ায় ভীষণ আগ্রহ মুজাহিদের

লিখছে শিশু মুজাহিদ হোসেন। শনিবার  তোলা ছবি।  প্রথম আলো
লিখছে শিশু মুজাহিদ হোসেন। শনিবার তোলা ছবি। প্রথম আলো

অর্ধেক ডান হাত ও পা নিয়ে জন্মেছে শিশুটি। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ও হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া—এগুলো তার লেখাপড়ায় বাধা হতে পারেনি। বইয়ের প্রতি তার খুব আগ্রহ। বিদ্যালয়ে না গেলেও ভালো লাগে না। তাই মায়ের কোলে চড়ে নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করে।

শিশুটির নাম মুজাহিদ হোসেন (৮)। সে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বিষ্ণাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র।

সোনারগাঁ উপজেলা সদর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরবর্তী আড়াইহাজারের সীমান্তবর্তী বিষ্ণাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গত শনিবার বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠ নিচ্ছে মুজাহিদ হোসেন। আর মা বেগম আক্তার বিদ্যালয়ের পেছনে বসে আছেন। স্কুল ছুটি হলেই বাসায় নিয়ে যাবেন সন্তানকে।

বেগম আক্তার জানান, তাঁর চার মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে মুজাহিদ সবার ছোট। ডান হাত ও ডান পায়ের অর্ধেক নিয়ে জন্ম নেয় সে। জন্মের দুই বছর পর তাঁর স্বামী মারা যান। স্বামী রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি অন্যের বাড়িতে কাজ নেন। সামান্য যা আয় হয় তা দিয়ে চলে সংসার। লেখাপড়া শিখিয়ে তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। তবে লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে ছোট ছেলেকে প্রতিদিন কোলে করে বিদ্যালয়ে নিয়ে যান। ছুটির পর আবার বাড়িতে ফেরেন। অন্যের বাড়িতে কাজ করে যত কষ্টই হোক না কেন মুজাহিদের লেখাপড়া চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খোরশেদ আলম জানান, মুজাহিদ বাঁ হাত দিয়ে লেখে। পড়াশোনায় সে খুব ভালো, মনোযোগী। এ কারণে শিক্ষকেরাও তাকে আদর করেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খালেকুজ্জামান বলেন, ‘আমি বিদ্যালয়ে নতুন যোগদান করেছি। শিশুটি বাঁ হাতে লিখে ভালো ফল করছে। মেধাবী এ ছাত্রের সব ধরনের দায়িত্ব আমি নিয়েছি।’