নেতার গুলিতে কর্মীর বুক এফোঁড়-ওফোঁড়

>
  • ২০১৬ সালে ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌফিক ফাঁকা গুলি ছোড়েন
  • গুলিতে নিহত হন যুবলীগ কর্মী নুরে এলাহী
  • গত রোববার আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পিবিআই
  • অভিযোগপত্রে তৌফিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে
  • এক মাস ধরে দুবাইতে রয়েছেন তৌফিক

একজন চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের নেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর। আরেকজন যুবলীগের কর্মী। দুই বছর আগে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত এক প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়ের সামনে তাঁরা অন্যদের সঙ্গে আলাপরত ছিলেন। ওই সময় দুটি ফাঁকা গুলি ছোড়েন কাউন্সিলর। আরেকটি ছোড়ার সময় যুবলীগ কর্মীর বুকের বাম পাশে লেগে বেরিয়ে যায়। মূহূর্তের মধে৵ই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ওই কর্মী। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় করা হত্যা মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে এই তথ্য উঠে আসে।

গত রোববার আদালতে এই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৌফিক আহমেদ চৌধুরীকে অভিযুক্ত করা হয়। তিনি প্রয়াত নগর আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে নগর যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য।

২০১৬ সালের ৫ মে রাত ৯টার দিকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের সরকার হাট বাজারে গুলিতে নিহত হন স্থানীয় যুবলীগ কর্মী নুরে এলাহী। এই ঘটনায় তাঁর মা আনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় মামলা করেন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে। প্রথমে মামলাটি হাটহাজারী থানার পুলিশ তদন্ত করে। সপ্তাহ খানেক পর পিবিআই তদন্ত শুরু করে।

তদন্ত শেষে পিবিআই চট্টগ্রামের পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ আদালতে কাউন্সিলর তৌফিককে আসামি করে চার পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র জমা দেন। এতে বলা হয়, ‘হাটহাজারীর মির্জাপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুল আফছারের নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিনে ২০১৬ সালের ৫ মে বিকেলে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা শেষে সন্ধ্যায় সরকার হাট বাজারে নির্বাচনী কার্যালয়ের সামনে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন নুরে এলাহীসহ ছয় থেকে সাতজন। ঘন্টা খানেক পর সেখানে আসেন কাউন্সিলর তৌফিক আহমেদ চৌধুরী। একপর্যায়ে তিনি তাঁর হাতে থাকা একটি পিস্তল দেখিয়ে উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ করে বলেন, নতুন অটোমেটিক অস্ত্র কিনেছেন। অনেক গুলি লোড করা যায়। এ সময় তৌফিক দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়েন। নিচের দিকে আরেকটি ছোড়ার সময় নুরে এলাহীর গায়ে পড়ে। মূহূর্তের মধ্যে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে তৌফিক ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত সরে পড়েন। ওই দিন রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান নুরে এলাহী।

অভিযোগপত্রে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীসহ ৪৭ জনকে সাক্ষী রাখা হয়েছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দুজন সাক্ষীর সঙ্গে প্রথম আলো কথা বলার চেষ্টা করলে তাঁরা নিরাপত্তার কারণে এই বিষয়ে গণমাধ্যমে কিছু বলতে রাজি হননি। তাঁরা বলেন, যা বলার আদালতে বলবেন।

তৌফিক দুবাইতে
এদিকে এক মাস ধরে দুবাইতে রয়েছেন ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৌফিক আহমেদ চৌধুরী। তার ছোট ভাই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য তানভীর আহমেদ চৌধুরী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়েছিলেন তাঁর ভাই। কাউকে গুলি করেননি। রাজনীতি করার কারণে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তৌফিককে এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।

গুলিতে নিহত নুর এলাহীর বড় ভাই সরওয়ার এলাহী বলেন, পিবিআইয়ের দেওয়া অভিযোগপত্রে শুধু একজনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁর দাবি, পরিকল্পিতভাবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা তাঁর ভাইকে খুন করেছে। কিন্তু তাঁদের আসামি করা হয়নি। এ জন্য তাঁরা আদালতে নারাজি আবেদন করবেন। আগামী ৭ আগস্ট অভিযোগপত্রটি গ্রহণের শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।

অভিযোগপত্রে কাউন্সিলর তৌফিকের বিরুদ্ধে নগরের কোতোয়ালি থানায় একটি অস্ত্র ও হাটহাজারী থানায় চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে বলা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রামের পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বলেন, তদন্তে-সাক্ষে ৵ সত্যতা পাওয়া গেছে কাউন্সিলর তৌফিকের গুলিতে নুরে এলাহীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি পলাতক থাকায় ঘটনায় ব্যবহৃত ৭ দশমিক ৬৫ বোরের পিস্তলটি উদ্ধার করা যায়নি।