নর্থ সাউথের ছাত্র পায়েলের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চান বাবা

সড়ক দুর্ঘটনায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান নিহত হওয়ার প্রতিবাদে হানিফ কাউন্টারের সামনে মানববন্ধন করছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। কদমতলী, চট্টগ্রাম, ৩১ জুলাই। ছবি: সৌরভ দাশ
সড়ক দুর্ঘটনায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান নিহত হওয়ার প্রতিবাদে হানিফ কাউন্টারের সামনে মানববন্ধন করছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। কদমতলী, চট্টগ্রাম, ৩১ জুলাই। ছবি: সৌরভ দাশ

‘আমার ছেলে কোনো অন্যায় করেনি। তাঁকে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে। আমি ছেলে হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। বিচারের দাবিতে পায়েলের (সাইদুর রহমান) বন্ধু-বান্ধব, ছোট ভাই ও বড় ভাইয়েরা যেন মাঠে থাকে।’

এভাবেই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্র সাইদুর রহমানের (পায়েল) হত্যার বিচার চাইলেন বাবা গোলাম মাওলা।

আজ মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম নগরের গরিবউল্লাহ শাহ মাজার এলাকায় হানিফ পরিবহন এন্টারপ্রাইজের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে এই দাবি জানান বাবা গোলাম মাওলা। সন্দ্বীপ অ্যাসোসিয়েশন এই কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পাশাপাশি নিহত পায়েলের বন্ধুরা উপস্থিত ছিলেন।

২১ জুলাই রাতে হানিফ এন্টারপ্রাইজের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়েছিলেন সাইদুর। ২৩ জুলাই মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার ভবের চর এলাকায় নদীতে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। পরে পুলিশ বাসচালক জালাল, সুপারভাইজার জনি ও চালকের সহকারী ফয়সালকে আটক করে।

চট্টগ্রামের বাসা থেকে ঢাকায় যাওয়ার পথে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর এলাকায় ‘বাথরুম’ পেয়েছে বলে যানজটে থেমে থাকা বাস থেকে নেমেছিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাইদুর রহমান। এর মধ্যেই যানজট কিছুটা ছাড়লে বাস এগোতে থাকে। সাইদুর দৌড়ে বাসে উঠতে গিয়ে নাকে-মুখে আঘাত পান। রক্ত বের হতে থাকে।

আদালতে স্বীকারোক্তিতে সুপারভাইজার জনি বলেন, আহত যাত্রীকে চিকিৎসা দেওয়ার বদলে বাসটির চালক, সুপারভাইজার ও চালকের সহকারী মিলে একটি সেতু থেকে নদীতে ফেলে দেন

অনুমতি নেই উল্লেখ করে শুরুতে কর্মসূচি পালনে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। পরে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বেলা ১১টায় মানববন্ধন শুরু হয়। প্রায় ৪০ মিনিট এ কর্মসূচি চলে। মানববন্ধন শেষে সাইদুরের বন্ধুরা বিক্ষোভ মিছিল করেন।

সন্দ্বীপ অ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রামের সভাপতি ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম বেলায়েত হোসেন মানববন্ধনে বলেন, সাইদুর কোনো দুর্ঘটনায় মারা যাননি। তাঁকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। এই খুনের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে হানিফ পরিবহনের কোনো গাড়ি চলাচল করতে দেওয়া হবে না। বেলায়েত হোসেন ঢাকায় বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের করা ‘বল্গাহীন’ উক্তির জন্য জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানান।

মানববন্ধনে অন্য বক্তারা বলেন, ঘটনার ১১ দিন পার হলেও হানিফ পরিবহনের পক্ষ থেকে কেউ নিহত সাইদুরের পরিবারকে সমবেদনার জানাতে আসেননি। পরিবহন খাতের বিকারগ্রস্ত কর্মীদের কারণে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে।

মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন, নাগরিক সংগঠন পিপলস ভয়েস চট্টগ্রামের সভাপতি শরীফ চৌহান, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম, নিহত সাইদুর রহমানের মামা সরোয়ার্দী বিপ্লব, ফাহাদ চৌধুরী, কামরুজ্জামান টিটু প্রমুখ।

আরও পড়ুন: