হঠাৎ বদলে গেল দৃশ্যপট

জয়ের আশা জেগে ওঠার পর সিলেটের উপশহর এলাকার আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সে ছুটে আসেন বিএনপি-সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। এখান থেকেই ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। সিলেট, ৩০ জুলাই। ছবি: আবদুস সালাম
জয়ের আশা জেগে ওঠার পর সিলেটের উপশহর এলাকার আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সে ছুটে আসেন বিএনপি-সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। এখান থেকেই ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। সিলেট, ৩০ জুলাই। ছবি: আবদুস সালাম

হঠাৎ করেই সিলেটে যেন দৃশ্যপট পাল্টে গেল। গতকাল সোমবার রাত আটটার পর থেকেই বিএনপি নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে থাকেন সিলেটের উপশহর এলাকার আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সের বাইরে। সেখানে ছিল নির্বাচন কমিশনের ভোটের ফল প্রকাশের জন্য অস্থায়ী কেন্দ্র। তাঁদের মুহুর্মুহু স্লোগানে ওই এলাকায় তৈরি হয় অন্য রকম পরিবেশ।

এর আগে বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী ওই কমপ্লেক্স এসে পৌঁছান। রাত পৌনে ১২টায় যখন রিটার্নিং কর্মকর্তা আলীমুজ্জামান ভোটের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করছিলেন, তখন কমপ্লেক্সের ভেতরেই ধানের শীষের পক্ষে তুমুল স্লোগান শুরু হয়। আর কমপ্লেক্সের বাইরে হাজার হাজার মানুষ একই স্লোগানে প্রকম্পিত করছিল। ওই সময় শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ি এবং মানুষের ঢল যাচ্ছিল ক্রীড়া কমপ্লেক্সর দিকে। মধ্যরাতেই প্রকম্পিত হচ্ছিল সিলেটের রাজপথ।

চূড়ান্ত ফল ঘোষণার পর দেখা গেল, আরিফুল হক জয়ের দ্বারপ্রান্তে। দুটি স্থগিত কেন্দ্রের ভোট বাদ দিলে আরিফুল হক চৌধুরী তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের চেয়ে ৪ হাজার ৬২৬ ভোটে এগিয়ে আছেন। আর স্থগিত দুটি কেন্দ্র ভোটের সংখ্যা ৪ হাজার ৭৮৭। ওই দুটি কেন্দ্রের ফলের পরই ঘোষিত হবে সিলেটের নতুন নগরপিতার নাম।

ক্রীড়া কমপ্লেক্স থেকে আরিফুল হক বেরিয়ে আসার পর তাঁকে ঘিরে উল্লাসে মেতে ওঠেন কর্মীরা। নেতা-কর্মীদের স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। এই স্লোগান গিয়ে থামে আরিফুল হকের বাসার সামনে। এরই মধ্যে শহরজুড়েই শুরু হয় মিছিল, যার গন্তব্য আরিফুল হকের বাসা। গভীর রাতেই পুরো শহর যেন উৎসবের নগরে পরিণত হয়।

স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের মতে, দুই সপ্তাহ ধরে সিলেটে কোণঠাসা বিএনপি নেতা-কর্মীরা গতকাল সোমবার সন্ধ্যার পর যেন নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ পান। হামলা-মামলা আর পুলিশি হয়রানিতে ঘরবাড়িছাড়া এসব নেতা-কর্মী যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন।

গতকাল ভোটের দিনও বিএনপির অধিকাংশ নেতা-কর্মীকে ভোটের মাঠে দেখা যায়নি। এজেন্টও ছিল না অনেক কেন্দ্রে। শুধু প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী কিছু নেতা-কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্র থেকে কেন্দ্র ঘুরে বেড়িয়েছেন। সরকারদলীয় প্রার্থীর পক্ষে কেন্দ্র দখলের অভিযোগ দিনভরই করেছেন।

দিনভর হতাশার ভেতরে থেকেও সন্ধ্যার পর ভোটের ফল ঘোষণা যতই এগিয়ে যাচ্ছিল, ততই আত্মবিশ্বাস বাড়ছিল বিএনপির। একপর্যায়ের রাত আটটার দিকে ফলাফল ঘোষণার কেন্দ্রে গিয়ে উপস্থিত হন আরিফুল হক। রাত যতই গভীর হতে থাকে, ততই বিএনপি প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হতে থাকে। প্রচণ্ড মনোবল নিয়ে তাঁরা নেমে পড়েন মাঠে। অবশ্য এ বিষয়ে আরিফুল হক চৌধুরীকে বাহবা দেন বেশির ভাগই নেতা-কর্মীই। তাঁর আত্মবিশ্বাসী অবস্থানের কারণেই মাঠে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিএনপি।

বিএনপি কর্মীদের হঠাৎ আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনের সময়ে বিএনপি নেতা-কর্মীরা কৌশলগত কারণে চুপ ছিল। কিন্তু আমরা সংগঠিত ছিলাম। আমাদের প্রত্যাশা ছিল আরিফুল হক চৌধুরী যে ভালো কাজ করেছেন, তাঁর ওপর যে জুলুম করা হয়েছে, তার জবাব মানুষ ব্যালটের মাধ্যমে দেবে।’

বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা মনে করেন, ‘সন্ধ্যার দিকে নেতা-কর্মীরা যখন বুঝতে পেরেছে যে ভোটের ফল আমাদের অনুকূলে আসতে পারে, তখন তারা দ্বিগুণ উৎসাহে মাঠে নেমেছে। শহরের রাজপথে নিজেদের অবস্থার পরিষ্কার দেখিয়েছে।’

এদিকে আজ সকাল থেকেই নগরের মানুষের মধ্যেও ছিল চমক জাগানিয়া এ ফল নিয়ে। গতকাল গভীর রাতে যাঁরা ফল সম্পর্কে জানতে পারেননি, তাঁরা সকাল থেকে ভোটের ফলের খোঁজ নিয়েছেন এবং আলোচনায় মেতেছেন। কয়েক দিন ধরে যে শঙ্কা আর চাপা আতঙ্ক ছিল, সেটা অনেকটাই কেটে গেছে।