বাংলাদেশ ব্যাংককে সাবধান হতে বলল সংসদীয় কমিটি

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভোল্টে রাখা সোনা নিয়ে দেশে–বিদেশে সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মনে করে অর্থ মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও সাবধান হতে বলেছে। আর রাজস্ব আদায়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষোভও প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

আজ বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে অর্থ মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকের আলোচ্য সূচিতে না থাকলেও আলোচনায় আসে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা রাখা সোনায় গরমিলের বিষয়টি। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক দাবি করে, ভল্টের সোনা ঠিক আছে। গণমাধ্যমে অতিরঞ্জিত তথ্য পরিবেশিত হয়েছে। বৈঠকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকলেও তারা এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ভল্টে রাখা সোনা ঠিক আছে। ভল্টের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই উন্নত। ৪২টি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। তবে কষ্টিপাথর আর আধুনিক যন্ত্রের মাপে কিছু তারতম্য হয়েছে। এ ধরনের তথ্য গণমাধ্যমে এল কেন? এমন প্রশ্ন রেখে কমিটি বলেছে, এতে দেশে–বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবধান হওয়া উচিত।

২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর। গত জানুয়ারিতে কমিটি শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর প্রতিবেদন জমা দেয়। গত ২৫ জানুয়ারি প্রতিবেদনটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো হয়। পরিদর্শন দল ভল্টে রাখা সোনার যাচাই-বাছাই শেষে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। তার মধ্যে প্রথম পর্যবেক্ষণ ছিল একটি সোনার চাকতি ও আংটি নিয়ে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২৩ আগস্ট কাস্টম হাউসের গুদাম কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ গোলাকার কালো প্রলেপযুক্ত একটি সোনার চাকতি এবং একটি কালো প্রলেপযুক্ত সোনার রিং বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ওই চাকতি এবং আংটি যথাযথ ব্যক্তি দিয়ে পরীক্ষা করে ৮০ শতাংশ (১৯ দশমিক ২ ক্যারেট) বিশুদ্ধ সোনা হিসেবে গ্রহণ করে প্রত্যয়নপত্র দেয়। কিন্তু দুই বছর পর পরিদর্শন দল ওই চাকতি ও আংটি পরীক্ষা করে তাতে ৪৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ (১১ দশমিক ২ ক্যারেট) সোনা পায়। আংটিতে পায় ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ সোনা (৩ দশমিক ৬৩ ক্যারেট)। ধারণা করা হচ্ছে, ভল্টে রাখার পর এগুলো পাল্টে ফেলা হয়েছে। প্রতিবেদন বলছে, ভল্টে থাকা সোনার চাকতি এবং আংটি পরীক্ষার পর দেখা গেল এগুলো সোনার নয়, অন্য ধাতুর মিশ্রণে তৈরি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরিদর্শন দল প্রতিটি রসিদের অনুকূলে জমা হওয়া সোনা যাচাই করেছে। তাতে দেখা গেছে, সোনার অলংকার এবং সোনার বারে ক্যারেটের তারতম্য করা হয়েছে। ২৪ থেকে ২০ ক্যারেটের ৯৬০ কেজি সোনার বেশির ভাগের ক্ষেত্রে ভল্টে ১৮ ক্যারেট হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে।

রাজস্ব আদায়ে সবার নিচে বাংলাদেশ
বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, জিডিপি অনুপাতে দেশে মোট রাজস্ব আদায় দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ সবার নিচে। এ বিষয়ে গত ১০ বছরেও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। গত ১০ বছরে দেশে জিডিপি অনুপাতে রাজস্ব আহরণ গড়ে ১০.৩ শতাংশ। অথচ ভারতে ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ, নেপালে ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ, পাকিস্তানে ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ১৩ দশমিক ১ শতাংশ। উন্নত অর্থনীতির দেশে জিডিপি অনুপাতে রাজস্ব আহরণ গড়ে ৩৫ দশমিক ৮ শতাংশ। অন্যান্য দেশের রাজস্ব আয় সংগ্রহ পদ্ধতি থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রয়োজনে পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়ে ভ্যাট-ট্যাক্সের আওতা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয় বৈঠকে।

কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, রাজস্ব আদায়ে অগ্রগতি না থাকায় কমিটি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এনবিআর যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থমন্ত্রীও এ বিষয়ে ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন।

সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ব্যাংকগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত সুদ ও সার্ভিস চার্জের কারণে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে সুদের হার কমানো এবং গোপন চার্জের মাধ্যমে গ্রাহক ভোগান্তি কমিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়।

আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, মো. আব্দুল ওয়াদুদ, ফরহাদ হোসেন ও শওকত চৌধুরী বৈঠকে অংশ নেন।