জাহাঙ্গীরকে হারিয়ে হাহাকার পরিবারে

তিনি ছিলেন একটি পরিবারের কর্তা। দুই কিশোরী মেয়ের বাবা, যিনি একই সঙ্গে তাদের মা ও বাবার দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি আরও ছিলেন পাঁচ বোনের একমাত্র বড় ভাই, যিনি দায়িত্বশীল একজন অভিভাবক হিসেবে মানুষ করেছেন তাঁদের। সেই মানুষটির অভাবে আজ গোটা পরিবারে নেমে এসেছে শূন্যতা আর হাহাকার।

তিনি হলেন ২৫ জুন রাজধানীর টিঅ্যান্ডটি কলোনিতে খুন হওয়া সিনিয়র অপারেটর জাহাঙ্গীর আলম। নিজের বাসা থেকেই তাঁর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিন রাত সোয়া ১১টার দিকে মতিঝিল থানায় অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন জাহাঙ্গীরের বোন শায়লা আক্তার।

আজ বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে শায়লা কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘কে, কেন আমার ভাইকে মেরেছে, বুঝতে পারছি না। আমার বড় ভাই ছিলেন আমাদের সব। বাবা মারা যাওয়ার পর তিনি আমাদের ছোট পাঁচটি বোনকে মানুষ করেছেন।’

জাহাঙ্গীর খুন হওয়ার পর দুই দিন পেরিয়ে গেলেও এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) যৌথভাবে এই মামলার তদন্ত করছে।

আজ সকালে মতিঝিল অঞ্চলের পুলিশের উপকমিশনার মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘যে অবস্থায় জাহাঙ্গীর আলমের লাশ আমরা তাঁর বাসায় পেয়েছি, যেসব আলামত পাওয়া গেছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে, এটি পরিষ্কার হত্যাকাণ্ড।’

উপকমিশনার আসাদুজ্জামান জানান, জাহাঙ্গীরের স্বজনসহ আরও অনেককে তাঁরা  জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।

মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জি এম ফরমান আলী জানান, জাহাঙ্গীরের লাশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে অনেক তথ্য মিলবে।

ময়নাতদন্তের পর গতকাল বুধবার রাতে জাহাঙ্গীর আলমের লাশ ব্রাহ্মবাড়িয়ার কসবায় তাঁর গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। হঠাত্ ভাইকে হারিয়ে স্তম্ভিত বোনেরা। তবে জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর কারণ ও তাঁর ব্যক্তিজীবন নিয়ে কুত্সা রটানো হচ্ছে বলে তাঁরা অভিযোগ করেন।

মুঠোফোনে শায়লা বলেন, ‘কী হারিয়েছি, সেটা আমরা বুঝতে পারছি। ভাইকে হারানোর পর মামলা করেছি ঠিকই; কিন্তু এখন মামলা লড়ব কীভাবে বুঝতে পারছি না। ঘোর অন্ধকার নেমে এসেছে আমাদের সামনে।’ শায়লা জানান, তাঁর স্বামী এখন বিদেশে অবস্থান করছেন।

শায়লা জানান, নদীয়া চৌধুরী (১৭) ও মহুয়া চৌধুরী (১৬) নামের দুই মেয়ের জনক জাহাঙ্গীর। মেয়েরা ছোট থাকতে স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। পরে দ্বিতীয় বিয়ে করলেও সে সংসার টেকেনি। তিনি জানান, দুই মেয়ে নিয়েই শেষ দিনগুলো কাটছিল জাহাঙ্গীরের। মেয়েরা মতিঝিল মডেল স্কুলে উচ্চমাধ্যমিকে পড়ছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে মেয়েদের সঙ্গে ভাত খেয়েছেন জাহাঙ্গীর। তারা কোচিং সেন্টারে যাওয়ার পর ওই হত্যাকাণ্ড ঘটে।

নদীয়া ও মহুয়া এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া অবস্থান করছে। মুঠোফোনে তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও তারা সাড়া দেয়নি।

শায়লার ভাষ্য, প্রথমে জাহাঙ্গীরের প্রতিবেশীরা তাঁকে ফোনে জানান যে তিনি অসুস্থ। পরে পুলিশের ফোন থেকে তাঁরা ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনা জানতে পারেন। সেখান থেকে ঢাকা এসে মামলা করেন তিনি। তিনি জানান, গুলিস্তান টিঅ্যান্ডটি এক্সচেঞ্জে সিনিয়র অপারেটর পদে কাজ করতেন জাহাঙ্গীর। পল্টন সুপার মার্কেটে ছবি তোলার একটি স্টুডিও আছে তাঁর।