দিনভর উত্তপ্ত ধানমন্ডি

আন্দলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
আন্দলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

বেলা দুটার দিকে ধানমন্ডির বিজিবি ৪ নম্বর গেটে প্রথম সংঘর্ষটি বাধে। একদিকে আওয়ামী লীগের কর্মী আর অন্যদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়। থেমে থেমে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে দুপক্ষের সংঘর্ষ।

মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা আহত কলেজের এক শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে জানায়, সকাল থেকেই তারা জিগাতলার দিকে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছিল। দুপুরের দিকে তাদের কিছু শিক্ষার্থী বাড়ি ফিরতে গেলে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের কাছে কিছু যুবক এসে শিক্ষার্থীদের মারধর করেছে, এমন ‘খবর’ ছড়িয়ে পড়লে সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে থাকা শিক্ষার্থীদের মাঝে উত্তেজনা তৈরি হয়। হামলায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু, ধরে নিয়ে যাওয়াসহ বেশ কিছু গুজব একের পর এক সেখানে ছড়িয়ে পড়ে।

আহত এক শিক্ষার্থী। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
আহত এক শিক্ষার্থী। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় থেকে একেকটি দল হয়ে বিজিবি গেটের দিকে এগোতে থাকে শিক্ষার্থীরা। তারা অবস্থান নেয় সীমান্ত স্কয়ারের দিকে। অন্যদিকে জিগাতলার দিকে অবস্থান নেন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ কর্মীরা। দুপক্ষই পরস্পরের দিকে ইটপাটকেল ছোড়ে, কিছুক্ষণ পরপর ধাওয়া দেয়। এ সময় শিক্ষার্থী ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের উভয় পক্ষেই আহত হয় অনেকে।

হামলার ব্যাপারে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মীদের কয়েকজন জানান, শিক্ষার্থীরা দুপুরে মিছিল নিয়ে ৩/এ–তে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ের দিকে এগোতে থাকে। তখন তাদের সরিয়ে দিতে গেলেই সংঘর্ষ শুরু হয়। হামলায় আওয়ামী লীগ অফিসের বর্ধিত অফিসের জানালার কাচও ভেঙে যায়।

সায়েন্স ল্যাবরেটরির সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
সায়েন্স ল্যাবরেটরির সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

বিকেল চারটার দিকে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মধ্যে বিজিবি গেটের সামনের দিকের কাচও ভেঙে যায়। এ সময় বিজিবির সদস্যরা বেরিয়ে এসে শিক্ষার্থী ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানান। পরে অবশ্য তাঁরা ফিরে যান। এই সংঘর্ষের মধ্যে আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে পুলিশ অবস্থান নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। অন্যদিকে একদল যুবকও কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

হামলা চলাকালীন পথচারী ও সাংবাদিকদের ছবি ও ভিডিও করতে বাধা দেওয়া হয়। একজন ফটোসাংবাদিককে ছবি তোলার অভিযোগে মারধর করা হয়।

হামলার একপর্যায়ে পরিস্থিতি শান্ত করতে বিজিবির চেষ্টা। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
হামলার একপর্যায়ে পরিস্থিতি শান্ত করতে বিজিবির চেষ্টা। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

সন্ধ্যার দিকে শিক্ষার্থীদের ১০ জনের একটি দল পুলিশের সহায়তায় আওয়ামী লীগের অফিসে গিয়ে ঘুরে দেখে যে তাদের কাউকে আটক রাখা হয়েছে কি না। সেখানে তারা ঘুরে কোনো শিক্ষার্থীকে আটক পায়নি। পরে ফিরে গিয়ে বাকি শিক্ষার্থীদের জানায় যে কাউকে ধরা হয়নি। তখন তারা আজকের মতো ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং জানায়, তিন দিন তারা দেখবে যে দাবিগুলো মেনে নেওয়া হয়েছে কি না। নয়তো তারা আবার নামবে।

গত ২৯ জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহন লিমিটেডের একটি বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। ওই ঘটনার প্রতিবাদে সে দিন থেকেই শিক্ষার্থীরা রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় নয় দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছে। আজ সপ্তম দিনের মতো তারা রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করে।

দিনভর মিছিল স্লোগানে উত্তাল ধানমন্ডি এলাকা। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
দিনভর মিছিল স্লোগানে উত্তাল ধানমন্ডি এলাকা। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ