তিন জঙ্গিই জেএমবির শুরা সদস্য

পুলিশকে হত্যা করে প্রিজন ভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেওয়া তিন জঙ্গিই জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) মজলিসে শুরার সদস্য। তিনজনই দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।
কারাগার সূত্রে জানা গেছে, এঁদের মধ্যে সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন (৩৮) ১৩টি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, এর মধ্যে দুটিতে তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। তাঁর বিরুদ্ধে আরও ২৪টি মামলা বিচারাধীন আছে।
হাফেজ মামুদ ওরফে রাকিব হাসানের বিরুদ্ধে ২৯টি মামলা বিচারাধীন আছে। ইতিমধ্যে চারটি মামলায় তাঁর সাজা হয়েছে, তার একটিতে তিনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত।
আর, জাহিদুল ইসলাম ওরফে মিজান ওরফে বোমা মিজান (৩৫) যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। তাঁর বিরুদ্ধে ২১টি মামলা বিচারাধীন। পাঁচটি মামলায় ইতিমধ্যে তাঁর সাজা দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে একটি মামলায় তাঁকে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছে।
এই তিন জঙ্গির মধ্যে সালাহউদ্দিন জেএমবিতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন। জেএমবির বেশির ভাগ নেতা মাদ্রাসায় লেখাপড়া করলেও সালাহউদ্দিন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। এ কারণে নীতিনির্ধারণে তাঁর মতামতকে জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আবদুর রহমান গুরুত্ব দিতেন।
নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার তারের পুকুর এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে সালাহউদ্দিন জেএমবির শুরুর দিকে জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত হন। ২০০৬ সালের ২৫ এপ্রিল তিনি গ্রেপ্তার হন। এর পরদিন সালাহউদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা প্রথম আলোকে বলেছিলেন, সালাহউদ্দিনের পারিবারিক নাম ছিল সোহেল। তিনি ঢাকার তেজগাঁও পলিটেকনিক্যালে লেখাপড়াকালে শায়খ রহমানের ভাই আতাউর রহমান সানির দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত হন। পরে তিনি ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও (ডুয়েট) ভর্তি হয়েছিলেন বলে জানা যায়।
২০০৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে দেওয়া জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান আতাউর রহমান সানির জবানবন্দি থেকে জানা যায়, শায়খ রহমান তাঁর ছোট ভাই সানিকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ১৯৯৯ সালে সালাউদ্দিনকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
সানি জবানবন্দিতে বলেন, সালাউদ্দিন শুরা সদস্য হওয়ার পর ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী বোমা হামলার আগ পর্যন্ত বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও সিলেট জেলার সাংগঠনিক দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে ২০০২ সালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ব্র্যাক অফিসে ডাকাতি, ২০০৫ সালের ৮ ডিসেম্বর নেত্রকোনা শহরে বোমা হামলা হয়।
আদালত সূত্র জানায়, ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করায় সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বে ২০০৩ সালের ২৪ এপ্রিল জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে হূদয় রায় ও ২০০৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর গনি গোমেজকে হত্যা করে জেএমবি। পরে এই দুই মামলায় তাঁর ফাঁসির আদেশ দেন আদালত।
এর মধ্যে গনি গোমেজ হত্যার ঘটনায় জেএমবির আরেক শুরা সদস্য হাফেজ মাহমুদেরও জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে। এ মামলায় হাফেজ মাহমুদেরও ফাঁসির দণ্ড হয়।
হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাকিব হাসানের বাড়ি জামালপুরের মেলান্দহের বংশীবেল এলাকায় । ২০০৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি জেএমবির খুলনা অঞ্চলের প্রধান ছিলেন।
মিজানের বাড়ি (৩৫) জামালপুর সদরের শেখেরভিটা এলাকায়। জেএমবির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ফাঁসির পর সংগঠনটি পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন মিজান। জেএমবির দুর্ধর্ষ নেতা তিনি। বোমার কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে সংগঠনটিতে রসদ জোগানোর বিষয়ে তিনি ছিলেন তৎপর।
২০০৯ সালের ১৪ মে রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়ার ভাড়া বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তখন তাঁর আস্তানা থেকে দুটি পিস্তল, ১৫টি তাজা বোমা, ২০০ ডেটোনেটর, ৩২ ধরনের বিপুল বিস্ফোরক ও রাসায়নিক দ্রব্য এবং বোমার সরঞ্জাম উদ্ধার করে।
গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারের হাই সিকিউরিটিতে রাকিব হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাসেল, কারাগারের পার্ট-১-এ সালাউদ্দিন ওরফে সজীব ওরফে তৌহিদ ও কারাগারের পার্ট-২-এ মিজান ওরফে বোমা মিজান ওরফে জাহিদুল হাসান সুমন ছিলেন।