'আপনারা জেনারেল মঞ্জুরকে মেরে ফেললেন' (বাকী অংশ)

বাকী অংশ:
২. মঞ্জুর পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন শোনার পর এরশাদ তৎক্ষণাৎ একজন অজানা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সহযোগীকে লাল টেলিফোনে মঞ্জুরকে সেনা হেফাজতে আনার জন্য নির্দেশ দেন। এরপর অন্য আরেকটি কথার পরিপ্রেক্ষিতে সেই ব্যক্তিকে তিনি ‘পরিকল্পনামতো’ এগোনোর নির্দেশ দেন।
৩. সদরউদ্দীন ও এরশাদের মধ্যে বিতর্ক হয়। সদরউদ্দীন এরশাদকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি কোন পরিকল্পনার কথা বলছেন, আমরা কি জানতে পারি?’
৪. পুলিশের আইজি কিবরিয়া ও এয়ার ভাইস মার্শাল সদরউদ্দীন উভয়েরই শঙ্কা ছিল যে মঞ্জুরকে পুলিশের হাত থেকে সেনা হেফাজতে নিয়ে আসা হলে তাঁর কোনো বিপদ হবে।
৫. এরশাদ যখন ১ জুন বিকেলে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে মঞ্জুরকে সেনা হেফাজতে নিয়ে আসার জন্য দরবার করছিলেন, তখন সদরউদ্দীন স্পষ্টতই মঞ্জুরের জীবননাশের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সাত্তারকে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘মঞ্জুরের কিছু হলে’ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিকে জাতির কাছে ‘জবাব দিতে হবে’। সদরউদ্দীনের আশঙ্কা সত্য প্রমাণ করে সে রাতেই চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে সামরিক কর্মকর্তাদের জিম্মায় থাকা অবস্থায় মঞ্জুরকে হত্যা করা হয়। অভিযোগ উঠেছে যে ঢাকা থেকে পাঠানো একজন ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা চট্টগ্রাম গিয়ে মঞ্জুরকে হত্যা করেছেন।
৬. পরদিন সকালে এয়ার ভাইস মার্শাল সদরউদ্দীন এরশাদকে অভিযুক্ত করে বলেন, ‘আপনারা জেনারেল মঞ্জুরকে মেরে ফেললেন।’ তিনি বলেন, ‘না।’ শ্রুতিলিখনের এ জায়গাটা পরিষ্কার করে বোঝা যায় না। তবে এরশাদ সম্ভবত বলেন, ‘কিছু সৈন্য...তাকে হত্যা করেছে।’ (শ্রুতিলিখনের এ জায়গাটা যিনি কম্পোজ করেছেন, তাঁর ইংরেজি দুর্বল ও অবোধ্য)। সদরউদ্দীন অবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, ‘অন্য কাউকে বলেন, আমাকে বিশ্বাস করতে বলবেন না।’ (চলবে)

লরেন্স লিফশুলৎজ
ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউর (হংকং) দক্ষিণ এশিয়া প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি দ্য গার্ডিয়ান, লে মঁদ দিপ্লোমাতিক, দ্য নেশন (নিউইয়র্ক) ও বিবিসির পক্ষে লিখেছেন। তিনি বেশ কিছু বই রচনা ও সম্পাদনা করেছেন। তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ: দি আনফিনিশ্ড্ রেভল্যুশন, হিরোশিমা’জ শ্যাডো ও হোয়াই বসনিয়া?
[email protected]

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন
গোপনীয়
বিএ ১০৩ মেজর জেনারেল এম এ মঞ্জুরের (সাবেক জিওসি, ২৪ পদাতিক ডিভিশন, চট্টগ্রাম সেনানিবাস) ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন।

লাশ শনাক্ত করেন: ইবিআরসির বিএসএস ৫৪২ লেফটেন্যান্ট কর্নেল শামসুর রহমান, পিএসসি।

মৃত্যুর সময়: ১৯৮১ সালের ১ জুন আনুমানিক রাত ১১:৩০ মিনিট

ময়নাতদন্ত পরীক্ষার সময়: ১৯৮১ সালের ২ জুন সকাল ৭:৩০ মিনিট

সংক্ষিপ্ত বিবরণ:
মেজর জেনারেল এম এ মঞ্জুরের মরদেহ চট্টগ্রামের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হয় ১৯৮১ সালের ২ জুন রাত প্রায় চারটায়। আর কোনো বিবরণ পাওয়া যায়নি।

শরীরের বাইরের অংশের পরীক্ষা:
লাশ শক্ত হয়ে ছিল। মস্তিষ্কের অক্সিপিটাল অঞ্চলের ডান দিকের প্রান্তে ৪ ইঞ্চি * ২ ইঞ্চি গভীর একটি বড় ক্ষত ছিল। গুলির আঘাতে হাড় ভেঙে সম্পূর্ণ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। হাড়ের বড় একটি অংশ উড়ে যায় এবং সেই ফাঁক দিয়ে মস্তিষ্কের ভেতরের পদার্থ বেরিয়ে পড়ে। শরীরে আর কোনো আঘাত ছিল না।

শরীরের অভ্যন্তরীণ অংশের পরীক্ষা:
সম্পন্ন করা হয়নি যেহেতু মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট।

মৃত্যুর কারণ:
মাথায় গুলির আঘাতে প্রচণ্ড শক ও ব্যাপক রক্তক্ষরণ।

চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ)
তারিখ: ২ জুন ১৯৮১


স্বাক্ষর

লেফটেন্যান্ট কর্নেল
গ্রেডেড স্পেশালিস্ট, প্যাথলজি
(এ জেড তোফায়েল আহমেদ)