রাজধানীতে নিহতের সংখ্যা বাড়ছে

রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। চলতি বছর শুধু জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে নিহতের সংখ্যা ২৪। ২০১৭ সালে এ সংখ্যা ছিল ২৩ এবং ২০১৬ সালে ১২।

চলতি বছর রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৭৪টি। এতে নিহত হয়েছে ১৬৭ জন ও আহত হয়েছে ৩৭৩ জন। গত তিন বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় রাজধানীতে নিহতের সংখ্যা ৫৮৮। আর চলতি বছর সারা দেশে দুর্ঘটনায় মারা গেছে ২ হাজার ৩৪২ জন।

সম্প্রতি বিমানবন্দর সড়কে দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হওয়ার ঘটনায় সড়ক দুর্ঘটনা এখন আলোচিত বিষয়। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করছে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যেই গত শুক্রবার মগবাজার মোড়ে বাসের ধাক্কায় এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।

রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বাস ও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা ৭০ শতাংশ। আর ট্রাফিক আইন না মেনে রাস্তা পারাপার হওয়ার সময় হতাহতের হার ৩০ শতাংশ। বাসের বেপরোয়া প্রতিযোগিতা, মোটরসাইকেলের অতিরিক্ত গতি ও হেলমেট ব্যবহার না করা এসব দুর্ঘটনার কারণ।

রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের এ পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) এক সমীক্ষায়।  রাজধানীতে ঘটা এসব দুর্ঘটনায় বছরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা।

সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ২৬৭। এতে মারা যায় ২৮০ জন ও আহত হয় ৩৫৯ জন। এ ছাড়া ২০১৬ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে ১২৬টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিল ১৪১ জন। আহতের সংখ্যা ৩৩৭।

অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক ও বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, রাজধানীর দুর্ঘটনাগুলোর বেশির ভাগই ঘটে সকালে। কারণ, এ সময় রাস্তা ফাঁকা থাকে। বাসগুলোও দ্রুতগতিতে চলে এবং যাত্রী তোলার জন্য প্রতিযোগিতা করে। আবার দিনের অন্যান্য সময়ে ঘটা দুর্ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায়, ট্রাফিক সিগন্যাল ছেড়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাস ও মোটরসাইকেল দ্রুতগতিতে চলতে শুরু করে। এ সময় পথচারীরা দৌড়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়।

সাইফুন নেওয়াজ আরও বলেন, এ বছর রাজধানীতে সাত মাসেই যে হারে মানুষ মারা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে নিহতের সংখ্যা অন্য যেকোনো বছরের হিসাবকে ছাড়িয়ে যাবে।

পুলিশের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এআরআই বলছে, দেশের অন্য সব মহানগরের চেয়ে শুধু ঢাকা মহানগরে দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। এর কারণ, ঢাকায় মানুষ ও যানবাহন—দুই-ই বেশি। রাজধানীতে পথচারীদের জন্য ৫৪টি স্থান সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এই স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো যাত্রাবাড়ী, ফার্মগেট, সায়েদাবাদ, শনির আখড়া ক্রসিং, তোপখানা, পুরানা পল্টন মোড় ও সোনারগাঁ-পান্থপথ ক্রসিং।

পরিবহন বিশ্লেষকদের মতে, রাজধানীর গণপরিবহনকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আনলে সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণ কমবে।