চাইলেও মিলছে না ২০ আগস্টের টিকিট

রাজধানীর মাজার রোড পেরিয়ে গাবতলী বাস টার্মিনালের দিকে যেতেই ডান পাশে পথের ধারে চোখে পড়ে ছোট একটি বটগাছ। এই বটগাছের ছায়ায় আজ মঙ্গলবার দুপুরে দেখা যায়, মানুষের দীর্ঘ এক লাইন ফুটপাত থেকে একেবেঁকে চলে গেছে এসআর ট্রাভেলস নামের বাস কাউন্টারের ভেতরে। এই কাউন্টার থেকে কেউ কেউ বের হচ্ছেন হাসিমুখে; কেউবা টিকিটের জন্য এসে গোমড়া মুখ করে বের হচ্ছেন।

অনেকে আবার ভ্যাপসা গরমে ঘাম ঝরিয়ে কাউন্টারের ভেতর প্রবেশের অপেক্ষা করছেন। সবার প্রত্যাশা ঈদের টিকিট। তবে শুধু টিকিট হলেই চলবে না, বেশির ভাগ যাত্রীর চাই ২০ আগস্টের টিকিট। কারণ চাঁদ দেখা হিসাবমতে, ২২ আগস্ট হতে পারে কোরবানির ঈদ। এসআর ট্রাভেলসের কাউন্টারের ভেতরে গিয়ে পছন্দমতো টিকিট চাইতেই টিকিটপ্রত্যাশীদের উত্তর মিলছে, ‘২০ আগস্টের টিকিট নেই।’

টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়ানো খায়রুল ইসলাম নামের এক যাত্রীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি ২০ আগস্টে রংপুর যাওয়ার টিকিট খুঁজছেন। খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের ছুটি হবে ২১ আগস্ট থেকে। তাই ২০ আগস্টের টিকিটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এ জন্য আজ সকালে প্রথমে গাবতলীর হানিফ পরিবহনের কাউন্টারে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে জানানো হয়, ২০ তারিখের টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। এসআর ট্রাভেলসের সামনে বেলা ১১টা থেকে দাঁড়িয়ে আছি।’

খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘২০ আগস্টের টিকিট না পেলে ১৬ আগস্ট বাড়ি যাব। ১৯ ও ২০ আগস্ট অফিস থেকে ছুটি নেব। তাহলে ২৩ আগস্ট ঈদের ছুটির পর ২৪ ও ২৫ আগস্ট শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি শেষে এ মাসের ২৬ তারিখ ঢাকায় ফিরব।’

২০ আগস্টের টিকিট আজ সকালে শেষ হয়ে গেছে জানিয়ে এসআর ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপক আমিন নবী প্রথম আলোকে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের রংপুর, নওগাঁ, বগুড়া, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও জয়পুরহাট জেলায় আমাদের বাস সার্ভিস রয়েছে। এই সাত জেলার প্রায় সব যাত্রীই ২০ আগস্টের টিকিট চাইছেন। কিন্তু আমাদের সীমিতসংখ্যক টিকিট রয়েছে। শীতাতপ ও চেয়ারকোচ মিলিয়ে ৫৬টি বাস দিয়ে এই চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। পথে যানজট হলে তো অবস্থা খারাপ হতে পারে। তাই বাড়তি ট্রিপ দেওয়ারও সুযোগ নেই।’

গাবতলীতে ঈদের টিকিটের জন্য যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন। ঢাকা, ৭ আগস্ট। ছবি: প্রথম আলো
গাবতলীতে ঈদের টিকিটের জন্য যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন। ঢাকা, ৭ আগস্ট। ছবি: প্রথম আলো

বেলা একটার দিকে একই দৃশ্য দেখা গেল হানিফ পরিবহনের কাউন্টারে। সকাল সাতটা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হলেও ভরদুপুরে কাউন্টারের সামনে মানুষের ভিড় দেখা যায়। এখানে সবাই প্রথমে চাইছেন ২০ আগস্টের টিকিট। আরমান হোসেন নামের এক যুবক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগেই জানানো হয়েছে ১৬ থেকে ১৯ আগস্ট সকাল পর্যন্ত টিকিট পাওয়া যাবে। ঠিক করেছি ১৭ আগস্ট সকালে ঢাকা ছাড়ব।’

হানিফ পরিবহনের ব্যবস্থাপক (উত্তরাঞ্চল) মো. মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ২০ আগস্ট চাহিদা থাকলেও কোরবানির ঈদে বাড়তি টিকিট দেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ এ সময় মহাসড়কে যাত্রীবাহী হাজার হাজার বাস ছাড়াও কোরবানির পশু বহনকারী অসংখ্য ট্রাক ঢাকামুখী থাকবে।

মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন হানিফ পরিবহনের ২০০ বাস উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকায় চলাচল করে। ঈদের সময় এই সংখ্যাই ধরে রাখার চেষ্টা করবেন। যানজটের কারণে ট্রিপের সংখ্যা কমেও যেতে পারে। তবে সড়কের পাশে পশুর হাট না বসলে, ঢাকা-টাঙ্গাইল চার লেনের কাজ ১৪ আগস্ট থেকে বন্ধ রাখা হলে, সাভার থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত যানজট না হলে এবং সিরাজগঞ্জ থেকে চান্দাইসোনার বাজার পর্যন্ত সড়ক সংস্কার করা হলে মহাসড়ক সচল থাকবে।’

এ দিকে ঈদের টিকিটে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেন অনেক যাত্রী। প্রতিটি টিকিটে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা। এ বিষয়ে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা বছরের অন্যান্য সময় ছাড় দিয়ে বাসের টিকিট বিক্রি করে থাকি। কিন্তু ঈদের সময় টিকিটের মূল্যে ছাড় দেওয়া সম্ভব হয় না। কারণ এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসের আসন পূর্ণ থাকলেও ফেরার সময় সেগুলো একেবারেই খালি থাকে। এর সঙ্গে বাসচালকসহ কর্মচারীদের ঈদ বোনাস দিতে হয়। এরপরও বিআরটিএর নির্ধারিত মূল্যে ঈদের টিকিট বিক্রি করছি।’

চাহিদা থাকলেও ঈদের টিকিট বিক্রিকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলেও জানান গাবতলীর ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনার সাইফুল আলম মুজাহিদ।