দখলতন্ত্রের কারণেই ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ দেশান্তরী হচ্ছে

আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে ‘আদিবাসীসহ প্রান্তিক মানুষের ভূমি থেকে উচ্ছেদ এবং তাদের মানবাধিকার’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সিরডাপ মিলনায়তন, ঢাকা, ৮ জুলাই। ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে ‘আদিবাসীসহ প্রান্তিক মানুষের ভূমি থেকে উচ্ছেদ এবং তাদের মানবাধিকার’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সিরডাপ মিলনায়তন, ঢাকা, ৮ জুলাই। ছবি: সংগৃহীত

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেছেন, দখলতন্ত্রের কারণেই দেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ দেশান্তরী হচ্ছে। এসব জাতিগোষ্ঠীর মানুষ একটি বিলীয়মাণ জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। 

মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশ থেকে মানুষকে চলে যেতে হয় কেন?
কাল বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। এ উপলক্ষে আজ বুধবার আয়োজিত এক সেমিনারে এ কথা বলেন সুলতানা কামাল। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘আদিবাসীসহ প্রান্তিক মানুষের ভূমি থেকে উচ্ছেদ এবং তাদের মানবাধিকার’ শীর্ষক সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।

এবারের আদিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘আদিবাসী জাতিসমূহের দেশান্তর: প্রতিরোধের সংগ্রাম’। আজকের আলোচনা সভায় এই দেশান্তরের ধারাবাহিক ইতিহাস, রাজনৈতিক নানা ঘটনাপ্রবাহ, দেশান্তরে রাষ্ট্রযন্ত্রের ভূমিকা, সুশাসনসহ নানা বিষয় আলোচিত হয়।

সুলতানা কামাল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা যদি সমুন্নত রাখা হতো তবে কোনো মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হতো না। মুক্তিযুদ্ধ শুধু একটি দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার সংগ্রাম ছিল না। সেটা বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ছিল না। ছিল সব মানুষের অধিকার সমুন্নত রাখার লড়াই।

সুলতানা কামাল মনে করেন, রাষ্ট্রীয় উপেক্ষার কারণে দেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীসহ নানা প্রান্তিক গোষ্ঠীর মানুষ পীড়নের শিকার হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র নিজেদের চশমা দিয়ে মানুষকে দেখে। তাদের কাছে যারা শক্তিশালী তাদেরই তারা পৃষ্ঠপোষকতা করে। আর তা না হলে সব মানুষকে ছেড়ে হেফাজতের কাছে যেতে হয় কেন আওয়ামী লীগকে?’

সেমিনারে সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, সংখ্যালঘু এবং ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের ভূমি দখল রোধ, নিরাপত্তার জন্য এবং তাদের দেশান্তর বন্ধ করতে বিশেষ আইন দরকার। আর এ জন্য দরকার জোর রাজনৈতিক সদিচ্ছার। বাম রাজনীতিক বাদশা বলেন, ‘জিয়াউর রহমান রাজনীতিকে জটিল করে ফেলেছিলেন। এরশাদ তা কুটিল করেছিলেন। আর এখন রাজনীতি বেশ সংকটাপন্ন হয়েছে।’

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে পাকিস্তানি ভাবধারা এখনো রয়ে গেছে। সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের দেশান্তরে রাষ্ট্র ও রাজনীতিই বাধ্য করছে।
অনুষ্ঠানে চাকমা রানি ইয়েন ইয়েন বলেন, উন্নয়ন, বনায়ন, পর্যটন ইত্যাদি নানা নামে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে উচ্ছেদ করা হয়। তারা দেশ ছাড়ে, কারণ তাদের বাধ্য করা হয়।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পড়েন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমেনা মোহসীন, নারী নেত্রী খুশী কবির, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস প্রমুখ।