ঢাকার খামারগুলোয় কোরবানির পশুর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ

খামারে পশু দেখতে এসেছে একদল স্কুলশিক্ষার্থী। গতকাল মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায়।
খামারে পশু দেখতে এসেছে একদল স্কুলশিক্ষার্থী। গতকাল মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায়।

হাটে হাজারো মানুষের ভিড় ঠেলে কিংবা বর্ষার কাদাজল ভেঙে কোরবানির পশু বাছাইয়ের ঝক্কি নেই। আছে ঘরোয়া পরিবেশে ও অনলাইনে পশু কেনার ব্যবস্থা। এ ছাড়া কেনার পর পশু অসুস্থ হয়ে পড়লে বদলের ব্যবস্থাও আছে।

পবিত্র ঈদুল আজহার জন্য পছন্দের পশু কিনতে ঢাকার খামারগুলোয় এমন আয়োজন দেখা যাচ্ছে এবারও। এসব খামারির বেশির ভাগই কেবল মাংসের জন্য বাণিজ্যিকভাবে পশু লালন-পালন করেন।

ঢাকা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, কয়েক বছর ধরেই ঈদুল আজহা সামনে রেখে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের এলাকায় পশু পালনে যুক্ত হচ্ছেন অনেক উদ্যোগী তরুণ। বাড়ছে পশুর সংখ্যাও। গত বছর ১ হাজার ৭৭৯টি খামারে কোরবানিযোগ্য ২৩ হাজার ৩১৬টি গবাদিপশু ছিল। এ বছর তা বেড়ে ৪৩ হাজারে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ৩৩ হাজার ৩৮৮টি গরু। খাসি ও ভেড়ার সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। আছে অল্পসংখ্যক দুম্বা ও উট।

বুধবার মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় এমন কয়েকটি খামার ঘুরে জানা গেল, খামারিদের বেশির ভাগ নিজস্ব খামারে গবাদিপশু লালন-পালন করেন। কেউ আবার ঢাকার কাছে কিংবা অন্য কোনো জেলায় কৃষকদের কাছে চুক্তিতে পশু বড় করার জন্য দিয়ে রাখেন। সেগুলো ঈদের এক-দেড় মাস আগে নিজের খামারে এনে বিক্রি করেন।

এসব খামারি ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের বড় করা পশুগুলোর অধিকাংশ হাটে তোলার প্রয়োজন হয় না। এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন, ফেসবুক প্রচারণা ও ব্যক্তিগত যোগাযোগের ওপর নির্ভর করেন তাঁরা। ক্রেতারা প্রয়োজনে একাধিকবার খামারে এসে পশু পছন্দ করতে পারেন। কিনে নেওয়ার পর কোনো পশু যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে তা বদলের ব্যবস্থাও রেখেছেন অনেকে। এসব সুবিধার কারণে ঢাকার অনেকেই এখন সরাসরি খামার থেকে পশু কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন।

দেখা যায়, খামারগুলোয় ক্রেতাদের আনাগোনা তেমন নেই। কেবল দু-একজন আগ্রহী ব্যক্তি ঘুরেফিরে পশুর সংগ্রহ দেখছেন, দাম সম্পর্কে ধারণা নিচ্ছেন। এমন একজন শ্যামলীর আকরামুল হক। গত বছরও তিনি এখান থেকে দুটি গরু কিনেছেন। তিনি বলেন, এখান থেকে গরু কেনার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে বাছাই করে রেখে গেলে ঈদের আগে আগে খামারের পক্ষ থেকে গরু বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। এ ছাড়া হাটের ভিড়, দালাল—এসব ঝামেলাও পোহাতে হয় না।

এই এলাকায় সবচেয়ে বড় খামারটি হচ্ছে সাদিক অ্যাগ্রো। খামারের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শরীফের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে তাঁরা সারা বছর নিজস্ব খামারে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের গরু-ছাগল পালন করে থাকেন। পাশাপাশি কয়েকটি জাতের গরু ভারত থেকেও আমদানি করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে সাদিক অ্যাগ্রো আমদানি করেছে আটটি ব্রাহমা জাতের ষাঁড়। দাম ধরা হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ লাখের মধ্যে। এই ষাঁড়গুলো যে কক্ষে রাখা হয়েছে, তার পরিবেশ অপেক্ষাকৃত উন্নত। নাম ‘ইন্টারন্যাশনাল মিউজিয়াম’। এ ছাড়া কাশ্মীর থেকে আনা হয়েছে দুটি সাদা মহিষ। প্রতিটির দাম ৫ লাখ টাকা। ৯০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে এখানে পাওয়া যাচ্ছে ভুটান থেকে আমদানি করা ছোটখাটো গড়নের ‘ভুট্টি’ গরুও। আছে দেশি ব্ল্যাক বেঙ্গল, যমুনাপাড়ি, বিটলসহ কয়েক প্রজাতির ছাগল। পাশাপাশি দেশি ও ভারতীয় জাতের বিভিন্ন আকারের গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে ৮০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত।

সাদিক অ্যাগ্রোর কাছাকাছি আল-আইমান অ্যাগ্রো নামের আরেকটি খামারে কথা হয় এর তত্ত্বাবধায়ক শাওন আহমেদের সঙ্গে। তিনি জানান, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে তাঁদের নিজস্ব খামারে এবার ৬০টি গরু লালন-পালন করা হয়েছে। এখন এগুলো বিক্রির জন্য ঢাকায় এনেছেন। আকার অনুসারে গরুগুলোর দাম ৮০ হাজার থেকে ৭ লাখ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া আছে দুটি দুম্বা ও ২০টি ছাগল।

অর্গানিক ডেইরি অ্যান্ড অ্যাগ্রোভেট নামের আরেক খামারে কথা হয় বিল্লাল নামের এক কর্মীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এই খামারে ২ লাখ থেকে ৬ লাখ টাকার গরু আছে। গরুগুলো খুব যত্নে পালন করা হয়। এসব গরুর খাবারের মধ্যে আছে ভুট্টা, খেসারি, চালের কুঁড়া, খইল, তাজা ঘাস, চিটাগুড়, খড় ইত্যাদি।

ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে গড়ে ওঠা এ রকম খামারের বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (খামার) এ বি এম খালেকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এসব খামারের বেশির ভাগ গড়ে উঠেছে ঢাকার মোহাম্মদপুর, সাভার, কেরানীগঞ্জ ও ধামরাই এলাকায়। তিনি বলেন, সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার আওতায় খামার পরিচালনা করতে পারলে তা খুব দ্রুত লাভজনক হয়ে ওঠে। এ জন্য এই খাতে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের সংখ্যা যেমন বছরে বছরে বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে পশুর সংখ্যাও।