ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল মুসল্লিরা

জিলহজ মাসের ৭ থেকে ১২ তারিখ হজের আনুষ্ঠানিকতায় পূর্ণ থাকে। তবে হজযাত্রীরা ৪০ থেকে ৫০ দিন সৌদি আরবে অবস্থান করেন। বাকি দিনগুলোও তাঁরা ইবাদত-বন্দেগি করে কাটান।

বাংলাদেশ থেকে এবার ১ লাখ ২৭ হাজার হজযাত্রী পবিত্র হজ পালন করতে আসছেন। ৫২৮টি এজেন্সির মাধ্যমে আসা এই হজযাত্রীরা বিভিন্ন এলাকায় বাড়িভাড়া নিয়ে থাকছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার মক্কার মিসফালাহ এলাকার কেদুয়ায় একটি বাড়িতে হজযাত্রীদের দেখতে গেলাম। এটি মোস্তফার বাড়ি নামে পরিচিত। সিঁড়ির পাশাপাশি লিফটও আছে। লিফটটি হঠাৎ হঠাৎ আটকে যায়। ধারণক্ষমতা চারজন। পুরুষ হজযাত্রীরা থাকেন ওপরের তলায়। এর মধ্যে যাঁদের সঙ্গে মা, স্ত্রী বা বোন হজ করতে এসেছেন তাঁরা থাকছেন নিচতলায়। এমন ২৮ জন নারী হজযাত্রী থাকেন এই ভবনে।

কাবা শরিফ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে বাড়িটি। বাড়ির ৪০৫ নম্বর কক্ষটিতে পাঁচজনের থাকার ব্যবস্থা আছে। মাঝারি ধরনের এই কক্ষে পাঁচটি লোহার খাটে ম্যাট্রেস-কম্বল বিছানো। কক্ষের চারপাশে ঘোরানো খাট। মাঝখানে সামান্য একটু খালি জায়গা। তাতেই খাওয়াদাওয়া, চলাফেরা। কক্ষটি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত। এখানে হজযাত্রীদের সব বাড়ির চিত্রই প্রায় এক রকম।

মক্কায় এসেই সবাই ওমরাহ করেন। অনেকে নিজের পর প্রিয়জনের নামেও ওমরাহ করেন। ওমরাহর নিয়ত করে কাবা শরিফ তাওয়াফের পর সাঈ করতে হয়। যাঁরা কুলিয়ে ওঠেন না, তাঁরা শুধু তাওয়াফ করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন।

হজযাত্রীরা যে এজেন্সির মাধ্যমে আসেন, তারাই তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা করে। হালকা মসলা, হালকা ঝাল দিয়ে দেশি রান্না করা হয়, যাতে সব বয়সীরা খেতে পারেন। বাবুর্চিরা বাংলাদেশি।

দৈনন্দিন কাজের বর্ণনা দিতে গিয়ে এই বাড়ির হজযাত্রীরা জানান, ফজরের নামাজ শেষে নাশতা খেয়ে অনেকে একটু ঘুমিয়ে নেন। তারপর চলতে থাকে দোয়া-দরুদ, কোরআন তেলাওয়াত। গোসল সেরে জোহরের নামাজ পড়তে ছোটেন কাবা শরিফে। বাসায় ফিরে দুপুরের খাবার খান। সবজি, মাছ বা মাংস ও ডাল থাকে নিয়মিত। খাবার শেষে কেউ কেউ একটু বিশ্রাম নেন। বেলা তিনটা থেকে আসরের নামাজের প্রস্তুতি নিতে হয়। আসরের নামাজের জন্য বের হয়ে একেবারে এশার নামাজ পড়ে বাসায় ফেরেন সবাই। জামাতে নামাজ আদায়ের পর কোরআন তেলাওয়াত করেন অনেকে।

রাতের খাবারের পদও দুপুরের মতোই থাকে বলে জানান হজযাত্রীরা। নামাজ ও তাওয়াফ শেষে বাড়ি ফিরে খাবার খেয়ে ক্লান্ত শরীরে বিছানায় এলিয়ে পড়েন। কারণ, আবার তাহাজ্জুদ ও ফজরের নামাজ দিয়ে পরের দিন শুরু হয়।