সড়কে যথেচ্ছ পার্কিং চলছেই

আরামবাগ এলাকায় ব্যস্ত সড়কের এক পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে বাস। গতকাল বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তোলা।  ছবি: প্রথম আলো
আরামবাগ এলাকায় ব্যস্ত সড়কের এক পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে বাস। গতকাল বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তোলা। ছবি: প্রথম আলো

আরামবাগ ঘরোয়া হোটেলের সামনে ইউটার্ন করছিল ‘গ্রিন ঢাকা’ পরিবহনের একটি বাস। প্রায় তিন মিনিট দুপাশে আটকে গেল অনেক যানবাহন। ট্রাফিক সংকেতের লাল বাতি সবুজ হলো, কিন্তু যানবাহন আটকেই থাকল।

এ দৃশ্যটি গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা তিনটার দিকের। এখানে যানজট সৃষ্টির কারণ প্রতিটি বাস ইউটার্ন করার জন্য সড়কে যে পরিমাণ জায়গা দরকার, তা সেখানে নেই। কারণ, সড়কের ওপর অবৈধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন পরিবহনের বাস। এক সারি নয়, দুই; কোথাও তিন সারিও।

ট্রাফিক সপ্তাহ চললেও আরামবাগ এইচ আর পেট্রলপাম্প এলাকা থেকে মতিঝিল ইডেন ভবন পর্যন্ত এলাকার অবস্থার কোনো পরিবর্তন নেই। সড়কে যানজট আর অবৈধ পার্কিংও আগের মতোই আছে। এলাকার দোকানি ও শিক্ষার্থীদের মতে, এখানে যানজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ ব্যস্ত সড়কে এভাবে বাস দাঁড় করিয়ে রাখা। তাই এই যানজট ইচ্ছাকৃত।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঘরোয়া হোটেলের বিপরীত দিক থেকে আরামবাগ পুলিশ বক্সের কাছেও অনেক বাস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। প্রিন্স পরিবহনের বাস কোথাও কোথাও তিন সারিতে দাঁড়িয়ে ছিল। একটি বাসে বসেছিলেন কর্মচারী রহমান। তিনি বলেন, এই জায়গা তাঁদের বাস পার্কিং করার জন্য দেওয়া হয়েছে। কে দিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলতে পারেননি।

ওয়েলকাম, শতাব্দী পরিবহনের বেশ কয়েকটি বাসও দুটি সারিতে রাখা। নটর ডেম কলেজের বিপরীত দিকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে আল মক্কা পরিবহনের দুটি বাস। রয়েছে সিল্ক লাইনের বাসও। এ ছাড়া সেখানে স্থায়ী কাউন্টার রয়েছে দূরপাল্লার বিভিন্ন পরিবহনের। সড়কের প্রায় অর্ধেকজুড়ে বাসগুলো নিয়মিত দাঁড়িয়ে থাকে। এলাকাবাসী জানান, এখানে রাস্তার ওপরে বাস রাখা এটা একটা স্থায়ী ব্যবস্থা হয়ে গেছে।

ঘরোয়া হোটেল এবং পুলিশ বক্সের কাছের দুটি ইউটার্ন দিয়ে ঘোরানো হচ্ছিল মিরপুর থেকে আসা বিকল্প অটো সার্ভিস, বিহঙ্গ, তরঙ্গসহ মিরপুর, গাবতলী, উত্তরা রুট থেকে আসা বিভিন্ন পরিবহনের সব বাস। ঘুরেই সেগুলো সড়কের ওপরই দাঁড়িয়ে পড়ছিল।            

এখানে বাস দাঁড় করিয়ে রাখার কারণে সৃষ্ট যানজটে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার করতে হয় নটর ডেম কলেজ, নটর ডেম ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। নটর ডেম কলেজের কাছে একটি পদচারী-সেতু রয়েছে। ওই সেতু থেকে নামার পর দাঁড়িয়ে থাকা বাসের কারণে শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো চলাচল করতে পারে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক কলোনির বাসিন্দা শাহীনুল ইসলাম ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, নিত্যনতুন পরিবহন কোম্পানি যোগ হচ্ছে, তারা বাস নামাচ্ছে, আর সেগুলো রাখার জায়গা হচ্ছে এলাকার সড়ক। এই নৈরাজ্য চলছেই, দেখার কেউ নেই। তিনি বলেন, তাঁর ছেলে নটর ডেম কলেজে পড়ে। কিন্তু এই নৈরাজ্যজনক অবস্থার কারণে ছেলেকে একা পাঠিয়ে তাঁরা আতঙ্কে থাকেন।   

নটর ডেম কলেজের একজন শিক্ষার্থী এই প্রতিবেদককে বলেন, ছাত্ররা যখন রাজপথে নেমেছিল, এসব বাস এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিল।

আরামবাগের একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক আফজাল হোসেন বলেন, পুলিশ সপ্তাহ চলছে, তারপরও সড়কের ওপর যেমন ইচ্ছে বাস দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে। কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা যা পেরেছে পুলিশ কেন তা পারবে না?

যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক-পূর্ব) মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সড়ক দখল করে দাঁড়িয়ে থাকা বাসগুলোকে জরিমানা করা হয়, মামলাও দেওয়া হয়। কিন্তু আবার চালকেরা আগের জায়গাতেই বাস দাঁড় করিয়ে রাখে। এ ছাড়া এখানে ট্রাফিক সংকেতগুলোতেও সমস্যা হয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রকৌশল বিভাগের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, গাড়ি রাখার ‘পার্কিং জোন’ চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এর বাইরেও গাড়ি রাখা হলে সেগুলোকে বাধা দেওয়ার দায়িত্ব ট্রাফিক পুলিশের। সে দায়িত্ব পালন করা হয় না।