রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে নিতে রাজি মিয়ানমার

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দ্রুত রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার। তবে দেশটি বলেছে, যেসব রোহিঙ্গা রাখাইনে ফিরে যাবে, আবেদনপত্র পূরণের সময় অবশ্যই তাদের সই ও আঙুলের ছাপ যুক্ত থাকতে হবে।

গতকাল মিয়ানমারের নতুন প্রশাসনিক রাজধানী নেপিডোতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলরের দপ্তরের মন্ত্রী চ টিন্ট সোয়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হতে হবে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে। এ নিয়ে আলোচনার পথ সুগম করতে দুই মন্ত্রীর মধ্যে একটি হটলাইন স্থাপিত হয়েছে।

মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলরের দপ্তরের বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। নেপিডোর থিনগাহা হোটেলে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে মাহমুদ আলী বাংলাদেশের এবং চ টিন্ট সোয়ে তাঁর দেশের নেতৃত্ব দেন। তবে রাত নয়টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোনো বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়নি।

মূলত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে রাখাইনের পরিবেশ কতটা উপযোগী হয়েছে, তা দেখতে মাহমুদ আলী তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে গত বৃহস্পতিবার মিয়ানমার পৌঁছান। আজ শনিবার তাঁর রাখাইন রাজ্যে যাওয়ার কথা রয়েছে।

মিয়ানমারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য গত বছর দুই দেশের মধ্যে সই হওয়া দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে গতকালের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। ওই আলোচনার ভিত্তিতে দুই দেশ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পরিচয় যাচাইয়ের সম্মত ফরম (আবেদনপত্র) দেওয়া হবে, যাতে করে তারা নিজেরাই তা পূরণ করতে পারে। আবেদনপত্র পূরণের সময় সই, আঙুলের ছাপ ও ছবিযুক্ত পরিচয়পত্র দিতে হবে। এতে নিশ্চিত হবে আবেদনকারী স্বেচ্ছায় ফিরতে আগ্রহী এবং এটি মিয়ানমারকে পরিচয় যাচাইয়ে সহায়তা করবে। এই মুহূর্তে কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য যে পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে, তার ভাষা পরিবর্তন করতে রাজি হয়েছে বাংলাদেশ।

চুক্তি অনুযায়ী মিয়ানমার দুটি অভ্যর্থনা কেন্দ্র এবং একটি ট্রানজিট ক্যাম্প তৈরি করেছে। বাংলাদেশ পাঁচটি ট্রানজিট ক্যাম্পের একটি তৈরি করেছে, অন্যটি তৈরির পথে আর বাকি তিনটি তৈরি করবে।

দুই দেশ নিজেদের আন্তর্জাতিক সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থান নেওয়া বাস্তুচ্যুত লোকজনকে দ্রুত প্রত্যাবাসনে রাজি হয়েছে। মিয়ানমারে অবস্থানরত লোকজনের মানবিক সহায়তা দেশটির মানবিক সংস্থার মাধ্যমে বিতরণ করা হবে।

দুই দেশ গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকর্তাদের মধ্যে নিবিড় যোগাযোগ এবং সমন্বিত সীমান্ত টহলের মধ্যে দিয়ে সন্ত্রাসবাদ দমন ও মাদক চোরাচালান বন্ধে সহযোগিতা বাড়াতে রাজি হয়েছে।

রাখাইনের বাস্তুচ্যুত জনগণের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি দুই মন্ত্রী সুপ্রতিবেশীসুলভ দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে সমাধানের ব্যাপারে তাঁদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। দুই দেশের স্বার্থে তাঁরা অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক বিকাশেও সম্মত হয়েছেন।

 রাখাইনে মানবিক সংস্থার প্রবেশ এখনো বন্ধ

আন্তর্জাতিক মানবিক চিকিৎসা সংস্থা মেডিসিনস স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স বা ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স (এমএসএফ) বলছে, স্বাধীন মানবিক সংস্থাগুলো উত্তর রাখাইনের অরক্ষিত ও ঝুঁকিতে থাকা সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে এখনো যথেষ্ট বাধার মুখে পড়ছে। এ কারণে প্রয়োজনীয় মানবিক ও চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। সংস্থাটি গতকাল আমস্টারডাম থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলেছে।

রাখাইনে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার পর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মূল অভিযানের দুই সপ্তাহ আগে গত বছরের ১১ আগস্ট উত্তর রাখাইনে এমএসএফের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এখনো এমএসএফ সেখানে কাজ করতে পারছে না।