শিক্ষার্থী বাড়লেও কমছে বগি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম শাটল ট্রেন। শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর অংশ এই ট্রেনে করেই ক্যাম্পাসে যাওয়া-আসা করে। কিন্তু আসন-সংকটের কারণে প্রতিদিনই ট্রেনে উঠতে তাঁদের রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। এতে বারবার দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

মূলত তিনটি কারণে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে রয়েছে ট্রেনের বগি না বাড়া, হুড়োহুড়ি করে চলন্ত ট্রেনে ওঠা এবং ট্রেনের ছাদ, পাদানি ও ইঞ্জিনে বসে যাতায়াত।

সর্বশেষ গত বুধবার সকালে ষোলশহর স্টেশনে শাটল ট্রেনে কাটা পড়ে দুই পা হারান সমাজতত্ত্ব বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী রবিউল
আলম। এর আগে ২০০৬ সালে ট্রেনে উঠতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে মারা যান বাংলা বিভাগের সাবিনা ইয়াসমিন। ২০০৮ সালে ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিদ্যা বিভাগের ছাত্র মাহমুদুল হাসানের।

তবে এরপর কোনো শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও প্রায় সময়েই শিক্ষার্থীদের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে এবং উঠতে গিয়ে অন্তত ১২ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এঁদের মধ্যে পা হারিয়েছেন দুজন।

দুটি শাটল ট্রেন দিনে সাতবার এবং দুটি ডেমু ট্রেন দিনে দুবার করে যাওয়া-আসা করে। প্রতিদিন শাটল ও ডেমুতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করেন প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী। এ জন্য প্রতিবছর প্রায় ৬০০ টাকা করে শিক্ষার্থীরা পরিশোধ করেন।

শিক্ষার্থীরা বারবার বগির সংখ্যা ও ট্রেনের শিডিউল বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছেন। রবিউল আহত হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার একই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থী বাড়ছে, বগি কমছে

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১ সালের তথ্য নির্দেশিকা (ডায়েরি) থেকে জানা যায়, ওই বছর শিক্ষার্থী ছিলেন ১৯ হাজার ১৩৪ জন। তাঁদের মধ্যে ছাত্র ও ছাত্রী ছিলেন যথাক্রমে ১৩ হাজার ৮৯৬ ও ৫ হাজার ২৩৮ জন। এর সাত বছর পর ২০১৮ সালে এসে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৮৩৯। ছাত্র ও ছাত্রী ছিলেন যথাক্রমে ১৭ হাজার ৮৫৯ ও ৯ হাজার ৯৮০ জন। অর্থাৎ প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন করে শিক্ষার্থী বাড়ছে।

২০১১ সালে দুটি শাটল ট্রেন নয়টি করে বগি নিয়ে যাতায়াত করত। বর্তমানে একটি ট্রেনে আটটি, আরেকটিতে সাতটি বগি চলাচল করছে। তবে তা মাঝেমধ্যে ছয়টি বগিতে নেমে আসছে। অর্থাৎ শিক্ষার্থী বাড়লেও উল্টো বগি কমছে।

গত বৃহস্পতিবার সকাল আটটায় নগরের ষোলশহর রেলস্টেশনে দেখা যায়, বটতলি স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটিতে এমনিতেই ভিড়। ট্রেন স্টেশনে ঢুকতেই হুড়োহুড়ি করে শিক্ষার্থীরা ট্রেনে উঠছিলেন। অনেকেই উঠে পড়লেন বগিতে। কেউ কেউ ইঞ্জিনের সামনেও বসে পড়েন। এই স্টেশন থেকেই ওই ট্রেনে ওঠেন কয়েক শ শিক্ষার্থী।

তিনজন শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ট্রেনের বগি কম। তাই হুড়োহুড়ি না করলে ট্রেনে ওঠা অসম্ভব। এ ছাড়া উপায় নেই।

শাটল ট্রেনের বগি কমিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরীও। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের চুক্তি অনুযায়ী প্রতি ট্রেনে নয়টি করে বগি দেওয়ার কথা। কিন্তু এখন তারা দিচ্ছে সাতটি। এর মধ্যে একটি মালবাহী বগিও দেওয়া হচ্ছিল। বিষয়টি আমরা রেলওয়েকে জানিয়েছি। তবে গত বুধবার থেকে প্রতি ট্রেনে আটটি করে বগি দেওয়া হচ্ছে।’

শাটল ট্রেনের বগি বাড়ানোর দাবিটি নিজেরও বলে জানিয়েছেন উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বিষয়টি বারবার উচ্চমহলে জানিয়ে আসছি। সর্বশেষ গত মঙ্গলবারও এ বিষয়ে রেলমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছি। প্ল্যাটফর্ম ও রেললাইন সংস্কার এবং প্রতি ট্রেনে ১২টি করে বগি দেওয়ার জন্য বলেছি। তিনি এ বিষয়ে কাজ শুরুর করার জন্য কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিয়েছেন।’

বগি-সংকট থাকায় এখন শাটল ট্রেনে আটটি করে বগি দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে ডিভিশনাল ট্রাফিক অফিসার ফিরোজ আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, নয়টি করে বগি দেওয়ার।’